মুরগির খামার করে সখির মাসে আয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা

3 months ago 41

লেখাপড়া বেশিদূর না করতেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায় সখির। স্বামীর সামান্য আয় দিয়েই কোনোরকম টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছিল তাদের সংসার। ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের বাবা-মা তারা।

একপর্যায়ে স্বামী আলী ডিশ ও ইন্টারনেটের ব্যবসা দেন। সেই ব্যবসার সুবাদে বাসায় ওয়াইফাই লাইন সংযোগ দেওয়া হয়। ইন্টারনেটে মুরগি লালন-পালনের ভিডিও দেখেন সখি। সেই ভিডিও দেখে তারও উৎসাহ জাগে মুরগি লালন-পালনের।

মুরগির খামার করে সখির মাসে আয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা

২০১৭ সালে দুই শতাধিক টাইগার মুরগি দিয়ে সখির খামারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে এক হাজার মুরগি। অথচ তার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ১৩ হাজার টাকা দিয়ে। এখন তার প্রতিমাসে আয় হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। ২০১৭ থেকে ২০২৪—এ সাত বছরে ৪০-৪৫ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। সখির স্বামী মো. আলী নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার দড়ি বিশনন্দী এলাকার বাসিন্দা।

সখি বলেন, ‘প্রথম যখন ২০০ মুরগি নিয়ে খামার শুরু করি তখন অনেক বাধা আসে। এরকম ঘরে মুরগি পালন করা যাবে না, মুরগি কেন পালন করতে হবে, লোকসান ছাড়া কোনো লাভ হয় না—এরকম নানা কথা শুনতে হয়েছে। একপর্যায়ে সংসার থেকেও বলা হয় এটা করার দরকার নেই। আমি ধৈর্য ধারণ করে কারও কথায় কান দেইনি। আমি মুরগি লালন-পালন শুরু করি। ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখতে শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমার খামার বড় হতে থাকে। প্রথম একটা ইনকিউবেটর (ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর মেশিন) কিনি, পরে পাঁচটি। বর্তমানে আমার খামারে একসঙ্গে ২০ হাজার বাচ্চা ফোটানো সম্ভব।’

মুরগির খামার করে সখির মাসে আয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা

সখির ভাষ্য, ‘২০১৭ সালে শুরুটা ছিল আমার ১৩ হাজার টাকা দিয়ে। বর্তমানে ৪০-৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে খামারে। এ সাত বছরে আমার এই পরিমাণ লাভ হয়েছে।’

২০০ টাইগার মুরগি দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন সখি। কেননা অন্যান্য মুরগির তুলনায় টাইগার মুরগির ওজন বাড়ে দ্রুত। ডিম ও মাংস—দুটোর জন্য এই মুরগি লাভজনক। ৪০ দিনেই এককেজি ওজন হয়ে যায়। চার মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। প্রায় দুই বছর ডিম পাড়ে। এটা লাভজনক। সখির খামারে বর্তমানে টাইগার মুরগি ছাড়াও ফাউমি, কোয়েল, টার্কিসহ বিভিন্ন জাতের হাজারের মতো মুরগি রয়েছে।

সখি বলেন, ‘বর্তমানে আমার খামার থেকে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ সব জায়গাতে থেকে এসে মুরগির বাচ্চা নিয়ে যায়। একদিনের বাচ্চা, ১৫ দিনের বাচ্চা ও একমাসের বাচ্চাসহ বিভিন্ন বয়সের প্রতিমাসে ৫-৬ হাজার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। যা থেকে প্রতিমাসে খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো থেকে যায়।’

সফল উদ্যোক্তা সখির স্বামী মো. আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী যখন প্রথম খামারের কথা বলেছিল তখন আমি না করেছিলাম। না করার পরও সে কিছু টাকা জমিয়ে আমাকে দেওয়ার পর আমি রাজি হয়ে মুরগি এনে দেই। মুরগি এনে দেওয়ার পর দেখলাম ভালোভাবে লালন-পালন করতে পেরেছে। মুরগি বড় হতে দেখে আমারও ভালো লাগে। দেখলাম মোটামুটি লাভজনক। তখন থেকে আমিও তাকে সহযোগিতা করি।’

মুরগির খামার করে সখির মাসে আয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা

তিনি বলেন, ‘এই খামারের মধ্য দিয়ে সংসারের আয় বেড়েছে। বর্তমানে সংসারের ৯০ পার্সেন্ট খরচ আমার স্ত্রীর টাকা দিয়ে চলে। এখন আমার স্ত্রী আমার চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারে।’

নারায়ণগঞ্জ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসরিন সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই ভালো একটা দিক। তিনি আমাদের নারী সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা চাই আমাদের সমাজের প্রতিটা নারী সামনের দিকে এগিয়ে আসুক।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সখি আমাদের সমাজের জন্য উদাহরণ। তাকে দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবেন। প্রয়োজন হলে আমরা তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবো।’

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article