মুসলিম ছাড়াও অন্য ধর্মের যারা মহররম উদযাপন করেন

2 months ago 8

আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক শোকাবহ দিন। এদিন কারবালার প্রান্তরে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) শহীদ হন। এ ঘটনা স্মরণে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতিবছর মহররমের ১০ তারিখে উদযাপন করেন আশুরা।

পুরো বিশ্বের শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি শোকাবহ দিন। শিয়া সম্প্রদায় ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা। তবে শুধু শিয়ারাই নন, অন্য ধর্মের এক বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী আছেন, যারা আশুরা বা মহররম উদযাপন করে থাকেন। অনেকেই এই বিষয়ে হয়তো জানেন না, এবং জেনেও খানিকটা হয়তো অবাক হচ্ছেন।

এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হিন্দু ধর্মের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম। ইমাম হোসাইনের অনুগত হিন্দু ব্রাহ্মণ এই সম্প্রদায়টি ‘হুসাইনি ব্রাহ্মণ’ নামে পরিচিত। ভারতের কিছু জায়গায় এদের ‘মোহিয়াল ব্রাহ্মণ’ নামেও ডাকা হয়।

মুসলিম ছাড়াও অন্য ধর্মের যারা মহররম উদযাপন করেন

এই সম্প্রদায়টি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কাশ্মীর, দিল্লি ও লখনৌর নানা প্রান্তে এখনো বেশ কয়েক হাজার হুসাইনি ব্রাহ্মণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন । গবেষকরা বলছেন, আরব উপদ্বীপেও বেশ কিছু হুসাইনি ব্রাহ্মণ বসবাস করেন।

মোহিয়ালরা হিন্দু ব্রাহ্মণদের মধ্যে যোদ্ধার জাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আজও তাদের বংশধররা অনেকে আর্মিতে যোগ দিয়ে থাকেন। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অনেক হুসাইনি ব্রাহ্মণকে দেখা যায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সম্প্রদায় কবে, কীভাবে ইমাম হোসাইনের অনুগত হলো?

জনশ্রুতি আছে, ৬৮০ খ্রীষ্টাব্দ বা হিজরি ৬১ সনের সেই যুদ্ধে নবী মোহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন ভারতের এক হিন্দু সারস্বত ব্রাহ্মণ যার নাম রিহাব সিধ দত। শুধু নিজে যুদ্ধ করাই নয়, তার সাত পুত্রও না কি ইউফ্রেটিস নদীর তীরে সেই যুদ্ধে আত্মবলি দেন।

প্রায় ১৪০ বছর আগে লেখা ‘বিষাদ সিন্ধু’ উপন্যাসে কারবালার যুদ্ধকে বাংলা সাহিত্যেও অমর করে গেছেন মীর মশাররফ হোসেন। ইতিহাস আর কল্পনা মেশানো সেই কাহিনিতে রিহাব সিধ দতের উল্লেখ না থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশে আজও বহু মানুষ আছেন যারা সেই বিবরণে সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন এবং নিজেদের সেই ব্রাহ্মণ বীরের বংশধর বলেই পরিচয় দেন।

মুসলিম ছাড়াও অন্য ধর্মের যারা মহররম উদযাপন করেন

রিহাব সিধ দতের সেই উত্তরসূরীরা আজ শত শত বছর পরেও ইমাম হোসাইনের প্রতি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতাপাশে বাঁধা পড়ে আছেন-যে কারণে তারা নিজেদের ধর্ম না পাল্টালেও শিয়া ইসলামের অনেক রীতিনীতি, বিশেষ করে মহররম মাসে আশুরা উদযাপন করে চলেছেন আজো।

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে এক বিরল সেতুবন্ধ রচনার কারণেই হুসাইনি ব্রাহ্মণরা ভারতের সমাজজীবনে একটি অসাধারণ জায়গা অধিকার করে আছেন। সংখ্যায় তারা কম হতে পারেন, কিন্তু স্বকীয়তায় ও ধর্মীয় সম্প্রীতিতে এক উজ্জ্বল জনগোষ্ঠী! সেই পরম্পরা অনুসরণ করেই আজো ভারতে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের জীবনচর্যায় হিন্দু ও মুসলিম-দুই ধর্মেরই কিছু কিছু রীতি রেওয়াজ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে থাকেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কেএসকে/জেআইএম

Read Entire Article