জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মোহাম্মদ আল হুসাইন স্থানীয় সময় শনিবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় ঘোষণা দেন, রোববার (৩০ মার্চ) মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে।
মুসলিম বিশ্ব যখন উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন ফিলিস্তিনের গাজায় ঈদের কোনো আনন্দ নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডের মানুষের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বেঁচে থাকা।
যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে গাজা
প্রায় দেড় বছর ধরে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজা পরিণত হয়েছে এক ধ্বংসস্তূপে। গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ৯২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজারেরও বেশি, আর আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ১৪ হাজারে।
গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঈদের খুশি যেন এক মরীচীকা। ঈদ মানে নতুন পোশাক, মিষ্টি খাবার, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। কিন্তু গাজার মানুষের কাছে এসব এখন বিলাসিতা।
‘আমাদের ঈদ নেই’
গাজার বাসিন্দা মোহামেদ আল সারকা বলছিলেন, ঈদ আমাদের জন্য নয়। আমাদের শিশুদের জন্যও নয়। তাদের জন্য একটি নতুন কাপড়ও কিনতে পারিনি। যেখানে খাবার জোটানোই দুষ্কর, সেখানে ঈদের আয়োজনের কথা ভাবাই অসম্ভব।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি হামলায় তার তিন সন্তান নিহত হয়েছে। এখন বেঁচে থাকা চার সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
৪৭ বছর বয়সী নোয়া আবু হানি যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছেন। তিনি আগে জাবালিয়া ক্যাম্পে ছিলেন, কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় ক্যাম্প বিধ্বস্ত হওয়ায় এখন আশ্রয় নিয়েছেন উনরোয়া ক্যাম্পে।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আগে ঈদের সময় কা’ক (ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী কুকিজ) তৈরি করতাম। সেগুলো বিক্রি করতাম রোজার শেষ দিনে, রাস্তার পাশে ছিল উৎসবের আমেজ। কিন্তু এখন কিচ্ছু নেই। শুধু বেঁচে থাকার লড়াই।
ফিলিস্তিনি শিশুরাও ভুলে গেছে ঈদের আনন্দ
সাত বছরের হানিন তার পোড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, ‘আমার জামা নেই, পুতুল নেই, আমাদের ঘরও নেই। আমি ঈদ পছন্দ করি না।’
শুধু হানিন নয়, গাজার শত শত শিশুর মুখে হাসি নেই। তারা জানেই না ঈদের খুশি কেমন হতে পারে। খাদ্য সংকটের কারণে তাদের ঈদের দিনে বিশেষ কিছু খাওয়ার সুযোগও নেই।
যুদ্ধের মধ্যে সামান্য আনন্দের চেষ্টা
উম্মে মোহামেদ নামের এক ফিলিস্তিনি মা তার সন্তানদের জন্য সামান্য কিছু কুকিজ বানানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, বাচ্চাদের মুখে সামান্য হাসি ফোটাতে চাচ্ছি। ঈদ নেই, কিন্তু ঈদের কথা ভুলিয়ে দিতে পারি না।
গাজার পরিস্থিতি এমন যে ঈদের দিনও মানুষ খাবার-পানির সংস্থানের জন্য সংগ্রাম করছে। নতুন পোশাকের পরিবর্তে এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
গাজার ঈদ : বেঁচে থাকার সংগ্রাম
গাজার প্রতিটি পরিবার আজ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, আশ্রয়ের অভাব চরমে। ঈদ তাই এখন গাজার মানুষের জন্য আরেকটি কঠিন দিন, যেখানে আনন্দের বদলে বুকভরা বেদনা আর বেঁচে থাকার যুদ্ধই একমাত্র বাস্তবতা।
‘ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু গাজায় ঈদ আসে না।’—এভাবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন গাজার এক বাসিন্দা, যেন তার কথায় ফুটে ওঠে পুরো ফিলিস্তিনের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর ও গালফ নিউজ