মূল আসামিদের বাদ দিয়ে চার্জশিট, এসআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

2 weeks ago 8

নোয়াখালীর সুধারাম থানায় পর্নোগ্রাফি মামলায় টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেজাউল করিম পান্নু নামে এক উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে উত্থাপিত আসামিদের সঙ্গে ঘুস লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

রোববার (২৪ আগস্ট) নোয়াখালী আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা (জিআরও) মো. সাইফুল ইসলাম বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ওই মামলার বাদী মামুন অর রশিদ চার্জশিট নাকচ করে আদালতে নারাজি দরখাস্ত দিয়েছেন। সেইসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম পান্নুর বিরুদ্ধে আসামিদের থেকে ঘুস গ্রহণের অভিযোগ করেন। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইন চার্জশিট দাখিলকারী ওই এসআইকে আদালতে তলব করলেও তিনি হাজির হননি। পরে টাকা লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মামুন অর রশিদ ও তার শিক্ষিকা স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবিসহ অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব করেন আসামিরা। এ ঘটনায় মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে গত বছরের ৫ মে সুধারাম (সদর) মডেল থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণসহ (আইসিটি) চাঁদাবাজি আইনে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন, হাতিয়া উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম (৪০), একই উপজেলার জাহাজমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন (৫২), মধ্য রেহানিয়া আবদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন তানবীর (৩৫), ম্যাক পার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিন্নাত আরা বেগম (৩৫) ও হাসান উদ্দিন বিপ্লব (৩৮) এবং সদর উপজেলার মাইজভান্ডার শরীফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন (৫৫)।

এরমধ্যে প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম ও শিক্ষক জিন্নাত আরা বেগম সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। আসামিরা কারাভোগ করায় সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পরে আরও সাত আসামিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে আদালতে এজাহার দাখিল করেন বাদী। এরা হলেন, হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর সহযোগী সাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ সাহাব উদ্দিন (৪৬), উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন (৪১), রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার (৪৭), উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জব্বার (৫৩), সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান (৫৪), অফিস সহকারী নাজিম উদ্দিন (৩৫) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী সোহরাব উদ্দিন (৩৬)।

পরে গত ২৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রেজাউল করিম পান্নু ১২ আসামিকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সদর উপজেলার মাইজভান্ডার শরীফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে (৫৫) অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

শিক্ষক মামুন অর রশিদের অভিযোগ, চার্জশিট থেকে আসামিদের নাম বাদ দিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে এসআই রেজাউল করিমের ব্যক্তিগত মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা পাঠান আসামি শরীফুল ইসলাম ও শিক্ষক জিন্নাত আরা বেগম। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কলরেকর্ড ও হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে লিখে আসামিদের প্রতিনিধির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মামলার প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই রেজাউল করিম। এসবের তথ্যপ্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে সুধারাম মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম পান্নুকে বার বার কল করেও পাওয়া যায়নি। এমনকি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলামকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফয়েজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। তথ্যপ্রমাণের খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article