আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে মাইলস ছেড়েছিলেন শাফিন আহমেদ। একপর্যায়ে গড়েছিলেন নতুন ব্যান্ড ভয়েজ অব মাইলস। দল নিয়ে, দলের গান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মামলা, বিবৃতির ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। তবে মৃত্যুর পর শাফিনকে গ্রহণ করেছে মাইলস। তার মৃত্যুর খবর ও পরে জানাজার খবর দলটি জানিয়েছে নিজেদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ-এ। অথচ এই পেজ-এই মাইলস ও শাফিনের দ্বন্দ্বের দুঃখজনক ঘটনাগুলো দেখেছিলেন ভক্তরা।
শাফিনের মৃত্যুর পর মাইলস-এর পেজ-এ জানানো হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মাইলস্-এর অগণিত ভক্ত, অনুরাগী শ্রোতাদের জানাচ্ছি যে, শাফিন আহমেদ আর আমাদের মাঝে নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত সফরে থাকাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ১০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’
দলটি আরও লিখেছে, ‘বাংলা ব্যান্ডসংগীতে মাইলসের সকল অর্জনের অংশীদার শাফিন আহমেদের অকাল মৃত্যু বাংলা গানের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, বন্ধু-স্বজন এবং অগণিত ভক্ত অনুরাগীর প্রতি আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন মাইলস ও শাফিনের ভক্তরা। তবে অনেকেই দলে সঙ্গে শিল্পীর দ্বন্দ্ব ও তার সঙ্গে অন্যায় আচরণের কথাও স্মরণ করেছেন। শাফিনের মৃত্যুর পর মানাম আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ৪৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছি। তিনি এখন একাই তার ক্যারিয়ার নিয়ে মুভ করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন শো করতে। তিনি নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। আজ যদি তিনি ব্যান্ডে থাকতেন, আমরা তার যত্ন নিতে পারতাম। তার সখ হলো সলো ক্যারিয়ার করার। কিন্তু যেখানেই যাচ্ছিলেন, তিনি তো মাইলসের গানই গাচ্ছিলেন। অনেকেই ব্যান্ড ছেড়ে গিয়ে নিজে নতুন গান করেছেন। কিন্তু তিনি মাইলসের গানই করছিলেন। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে ডিসপিউটও ছিল। আমরা কিছু বলতাম না, কারণ আমাদের সবারই বয়স হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সঙ্গে দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল। যোগাযোগ কমে গিয়েছিল।’
কাল সোমবার দেশে আসছে শাফিনের মরদেহ। সে খবরও ফেসবুক পেজ মারফত ভক্তদের জানিয়েছে মাইলস। তারা জানায়, আগামী (৩০ জুলাই) মঙ্গলবার বাদ জোহর তার দ্বিতীয় জানাজা হবে ঢাকার গুলশান আজাদ মসজিদে।
২০১০ সালের শুরুর দিকে প্রথমবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মাইলস থেকে থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন শাফিন। কয়েকমাস পর ফের ব্যান্ডে ফেরেন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে আবারও তিনি মাইলস ছেড়ে দেন। কয়েকমাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে ফের ব্যান্ডে ফিরেছিলেন। সর্বশেষ শাফিন আহমেদ মাইলস ছাড়েন ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে। ফেসবুক পোস্টে তাকে সাবেক প্রধান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে দলটি। লিখেছে, ‘তিনি ছিলেন স্বনামধন্য বাংলাদেশী রক ব্যান্ড মাইলসের সাবেক প্রধান কণ্ঠশিল্পী।’
ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় ব্যান্ড ‘মাইলস’। কিছুদিন পর এতে যুক্ত হন দুই ভাই শাফিন ও হামিন। এ পর্যন্ত মাইলসের প্রকাশিত অ্যালবাম ১১টি। এর বাইরে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ‘বেস্ট অব মাইলস-১’ ও ‘বেস্ট অব মাইলস-২’।
শাফিন আহমেদ উপমহাদেশের কিংবদন্তি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্তের ছোট ছেলে। তার বড় ভাই তাহসিন আহমেদ এবং মেঝো ভাই হামিন আহমেদ। তার তিন সন্তান। বড় ছেলে আজরাফ আহমেদ, মেয়ে রানিয়াহ দৌলা আহমেদ ও ছোট ছেলে রেহান আহমেদ।
এমআই/আরএমডি/জিকেএস