মেজর সিনহার জীবন দিয়ে অনেকের জীবন রক্ষা করে গেছেন

3 months ago 10

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলাকে ‘ঠান্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মেজর সিনহা নিজের জীবন দিয়ে অনেকের জীবন রক্ষা করে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ওইদিন মেজর সিনহা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে তিনি আদালতেও কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মামলার মূল বিষয় আসামিদের পরিচয় নয়, বরং মুখ্য হচ্ছে ভিকটিম, মেজর সিনহা। আজ এই মামলার ক্লোজিং আর্গুমেন্ট ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, এটা কোনো আত্মরক্ষার ঘটনা নয়, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

তিনি বলেন, আসামিপক্ষের দাবি ছিল মেজর সিনহা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালান।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ যুক্তিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আইনে আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও সেখানে একটি মৌলিক নীতি আছে, ‘ডকট্রিন অব প্রোপোরশনালিটি’। আপনি যদি দেখেন কেউ লাঠি হাতে আসছে, তার জবাবে তাকে গুলি করে হত্যা করা যাবে না। একইভাবে, মেজর সিনহা গাড়ি থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় দুই হাত তুলে নামেন, এরপর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর নিশ্চিত করার জন্য তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরা হয়। এটা আত্মরক্ষার মধ্যে পড়ে না, এটি স্পষ্টতই হত্যা।

তিনি বলেন, আসামিরা যে আত্মরক্ষার অজুহাত দিয়েছে, তা প্রমাণে তারা কোনো সাক্ষী, মৌখিক প্রমাণ কিংবা পরিস্থিতিগত প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। বরং মামলায় উপস্থাপিত সব সাক্ষী এবং আসামিদের জবানবন্দি বলছে, মেজর সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, একটি সময় বাংলাদেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় পুলিশের সাক্ষ্যকে অবিশ্বাস করা হতো। কিন্তু এখন সেই ধারা বদলেছে। পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যকেও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করতে হবে আসামিপক্ষকেই। এই মামলায় মেজর সিনহার সঙ্গী শফায়েত, পথচারী ও স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ অনেকের সাক্ষ্য এসেছে, যা একে অপরকে সমর্থন করেছে। তারা সবাই বলেছেন, মেজর সিনহা নিরস্ত্র ছিলেন, এবং তাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ‘বিয়ন্ড অল রিজনেবল ডাউট’ প্রমাণ করতে পেরেছে যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল এবং আসামিরা প্রত্যেকে এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

তিনি বলেন, মেজর সিনহার মৃত্যু ছিল পাহাড়ের মতো ভারী। এটি পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছে। এই হত্যার বিচার করতে না পারলে তা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক। আবরার ফাহাদ যেমন তার জীবন দিয়ে অনেক মেধাবী তরুণের জীবন বাঁচিয়েছেন, ঠিক তেমনই মেজর সিনহার মৃত্যুও অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছে, যারা ভবিষ্যতে এই ‘প্রদীপদের’ হাত থেকে রক্ষা পেলো।

তিনি ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে বলেন, একসময় ক্রসফায়ারের নামে হত্যা হতো, পরে বলা হতো গুলি বিনিময় হয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি, মেজর সিনহার ঘটনাটি কোনো ক্রসফায়ার ছিল না, এটি পরিকল্পিত হত্যা। এখন সেই সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হলে এই হত্যার বিচার করতে হবে। এই বিচার শুধু সিনহার পরিবারের জন্য নয়, এটা আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য।

‘আমরা চাই এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, যা সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যের মতো আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য হয়ে ওঠে’- বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস

Read Entire Article