এইচএসসি পরীক্ষায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। বিগত ২০ বছরের ইতিহাসে এবারই পাসের হার সর্বনিম্ন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিগত বছরের চেয়ে অর্ধেকের কম। এমন বাস্তবতায় মেডিকেল ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ভর্তিচ্ছু অসংখ্য শিক্ষার্থী এসএসসিতে ভালো ফল করেও এইচএসসিতে ছন্দপতন ঘটায় আবেদনের ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হচ্ছেন। তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। এটিকে ‘বৈষম্যমূলক’ ও ‘সুযোগের অসমতা’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০২৪ সালে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল এএসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ মিলিয়ে ৯ পয়েন্ট। এবার ফল বিপর্যয়ের পর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দাবির মুখে তা ৮.৫ পয়েন্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ, এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ৮.৫ পয়েন্ট পেলে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবেন।
গত ২৯ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত সভায় আবেদনের ক্ষেত্রে জিপিএ কমানো হয়। কর্তৃপক্ষের এমন ‘উদার’ সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছিলেন অসংখ্য শিক্ষার্থী-অভিভাবক। তবে ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) প্রকাশিত এমবিবিএস ও ডেন্টাল ভর্তি নীতমালায় সেই খুশিতে ভাটা পড়েছে। কারণ সেখানে এসএসসি ও এইচএসসিতে পৃথকভাবে কমপক্ষে জিপিএ-৪ পাওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকে আবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

শর্ত বাতিলের দাবি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের
এমবিবিএস ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতায় পৃথকভাবে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৪ পাওয়ার শর্ত তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন তাজমিরা তানজু। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে মেডিকেল ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। কিন্তু এইচএসসিতে জিপিএ কম এসেছে তার। তাজমিরার মা তহমিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, এসএসসিতে মেয়েটা গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার ৩.৮০ পেয়েছে। এমন ফল কীভাবে হলো বুঝতে পারছি না। আমি চাই, মেয়েটাকে অন্তত ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আবেদনে জিপিএ কমলো
মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, যে বিষয়ে এলো পরিবর্তন
মেয়ের আত্মবিশ্বাস রয়েছে জানিয়ে তহমিনা বলেন, ও বলছে- আম্মু জিপিএ কম এলেও আমাকে আবেদনের সুযোগ দিলে আমি চান্স পেয়ে যাবো। তার মানে ওর প্রস্তুতি ভালো। এখন সরকার যদি বিবেচনা করে তাহলে মেয়েটা মেডিকেল ভর্তির চেষ্টার সুযোগ পাবে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আরিফুর রহমান বাবু। তার মেয়ে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও এবার জিপিএ-৩.৯২ পেয়েছেন। মাত্র ০.০৮ পয়েন্ট কম পাওয়ায় ভর্তির আবেদনের সুযোগই দেওয়া হবে না- এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না তিনি।

আরিফুর রহমান বাবু জাগো নিউজকে বলেন, এবার সারাদেশের শিক্ষার্থীদের গড় ফলাফলটা বেশ খারাপ হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রম আমার সন্তানও জিপিএ একটু কম পেয়েছে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার জন্য তার প্রস্তুতি ভালো। সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়, তার মেধার স্বাক্ষর রাখতে চায়। কিন্তু তাকে আবেদনের সুযোগই দেওয়া হবে না- এটা মোটেও ভালো সিস্টেম (পদ্ধতি) হতে পারে না।
তিনি বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে তার পয়েন্ট ৮.৫-এরও বেশি। কিন্তু এইচএসসিতে ০.০৮ পয়েন্ট কম থাকায় তাকে প্রতিযোগিতায় নামতেই দেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরসহ কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
অভিভাবকরা শর্ত (পৃথকভাবে জিপিএ-৪) তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তা সম্ভব নয় বলে মনে করেন মেডিকল ও ডেন্টাল ভর্তি কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সব দিক বিবেচনা করেই এ শর্তারোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তির নীতিমালা তৈরি করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ফলাফল নিম্নমুখী হওয়ায় এবার আমরা তো উদারতা দেখিয়েছিই। জিপিএ কমানো হয়েছে। আগে ছিল এসএসসি-এইচএসসি মিলিয়ে ৯, এবার তা ৮.৫ পয়েন্ট করা হয়েছে। এখন এসএসসি ও এইচএসসিতে যে ন্যূনতম শর্ত জিপিএ-৪ দেওয়া হয়েছে, তার নিচে তো নামা সম্ভব নয়। একজন শিক্ষার্থীকে আপনি এমবিবিএস পড়াবেন, তার তো ন্যূনতম একটা জিপিএ পেয়ে আসতেই হবে। এর নিচে নামা আর সম্ভব নয়।
একই কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, জিপিএ কমানো নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভা হয়েছে। সেখানে সব দিক বিবেচনা করা হয়েছে। এরপর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর আর কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা না। তারপরও যারা সুযোগ পাচ্ছে না, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া তো কিছু করার নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য জায়গায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অবারিত সুযোগ তাদের রয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা কবে, নীতিমালায় কী আছে
দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তির আবেদন খুব শিগগির শুরু হবে।
বিএমডিসি প্রকাশিত নীতিমালা অনুযায়ী- এবার অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এমবিবিএস ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী- বাংলাদেশি আবেদনকারীকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান দুটি পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮.৫০ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৪.০০-এর কম থাকলে আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগসহ পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পাঠ্য থাকতে হবে। একই সঙ্গে জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে।
প্রকাশিত নীতিমালা অনুযায়ী- ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তবে ২০২২ সালের পূর্বে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবেন না।
এএএইচ/এএমএ/এমএস

6 hours ago
5









English (US) ·