মেরামতে ব্যয় ৫৪ কোটি টাকা, বছরও টেকেনি

7 hours ago 4

সড়কের নানা স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত ও ফাটল। অনেক জায়গায় পিচ উঠে গেছে। কোথাও কোথাও যেন পুরো রাস্তা ধসে গেছে। হেলেদুলে চলাচল করে যানবাহন। প্রায় সময় গাড়ি উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। এ যেন নারায়ণগঞ্জের মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের প্রতিদিনের চিরচেনা চিত্র। ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক মেরামতের বছরান্তে এ অচলাবস্থায় পরিণত হয়েছে।

বন্দর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কটি পরিণত হয়েছে জনদুর্ভোগের প্রতীক হিসেবে। প্রতিদিন হাজারো মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় এ পথ ধরে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের।

কিন্তু এ সড়কটি একসময় ভালো ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হওয়ার পর পাল্টে যায় চিত্র। সময়ের পরিক্রমায় সড়কটিতে বাড়তে থাকে ভারি যানবাহন থেকে শুরু করে ছোট-মাঝারি যানবাহনের চাপ। আর এ যানবাহনের চাপ নিতে পারেনি সড়কটি। অল্পসময়ের মধ্যে সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে।

মেরামতে ব্যয় ৫৪ কোটি টাকা, বছরও টেকেনি

তবে কর্তৃপক্ষ আশার বাণী শুনিয়েছেন, মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এ সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ কিলোমিটার এ সড়কে পিচঢালাই, চারটি কালভার্ট ও একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালের শেষদিকে শেষ হয় সড়ক মেরামতের কাজ। কিন্তু বছর পার না হতে বড় গর্ত, ফাটল ও ধসে গেছে সড়কটি। মাঝেমধ্যে সাময়িক সংস্কার করা হলেও এতে কোনো লাভ হয় না। চলতি মাসে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়কটি বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন
আটকে আছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের কাজ, ভোগান্তি
সড়ক যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা, ৬ বছরেও শেষ হয়নি কাজ
নারায়ণগঞ্জে সড়ক সংস্কারের দাবিতে দিনভর অবরোধ-বিক্ষোভ

স্থানীয়রা জানান, নিম্নমানের সামগ্রী ও ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে সড়কটি ৬ মাসও টেকেনি। বৃষ্টি হলে এ সড়ক দিয়ে আর চলাচল করার মতন অবস্থা থাকে না। তখন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে ১২ কিমি পথ পাড়ি দিতে কয়েকঘণ্টা লেগে যায়। পাশাপাশি রাত হলে যানজটের সুযোগে ঘটে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা খাতুন বলেন, এটা কোনো রাস্তার পর্যায়ের পড়ে না। কয়েকদিন পরপর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মানুষ মারা যায়। বৃষ্টি হলে মানুষ চলাচল করতে পারে না। গর্ভবতী নারীরা চলাচল করতে পারে না।

মেরামতে ব্যয় ৫৪ কোটি টাকা, বছরও টেকেনি

আলিমুদ্দিন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, এ রাস্তার অবস্থা অনেক খারাপ। মানুষ অনেক ভোগান্তির মধ্যে আছে। কয়েকদিন পরপর গাড়ি উল্টে যায়। গাড়ি উল্টে গেলে রাস্তায় চলাচল বন্ধ থাকে। যানজট লেগে থাকে। রাস্তায় চলাচল বন্ধ থাকলে সংস্কার করা হয়। কিন্তু সে সংস্কার বেশিদিন টিকে না।

কভার্ডভ্যান চালক রাসেল বলেন, আমাদের প্রতিদিন এ রাস্তায় চলাচল করতে হয়। গর্তে গাড়ির চাকা দেবে যায়। বড় গর্তের কারণে সারাদিন রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। দ্রুত এ রাস্তার সংস্কার করার দরকার।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও জনস্বার্থে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রেখেছে সরকার।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকায় অধিকাংশ ভারী যানবাহন এ রুট ব্যবহার করছে। কিন্তু এ সড়কটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। তবুও সড়কের যেসব জায়গায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা ওইসব স্থান দ্রুত মেরামত করে দিচ্ছি। চলতি অর্থবছরে আমরা সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করবো। আশা করছি, আগামী জানুয়ারির মধ্যে সড়কটি চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠবে।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article