মেরামতেই চলে যায় আয়ের বড় অংশ, নতুন অটোরিকশা চান হেনা বেগম

3 months ago 18

প্রায় এক দশক আগে বিয়ে হয় হেনা বেগমের। পরে ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক পুত্রসন্তান। তবে সংসারে ছিল না সচ্ছলতা। স্বামীর উপার্জনে শ্বশুর-শাশুড়ি আর সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোরকম দিন চলে যাচ্ছিল।

একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজমিস্ত্রি স্বামী। অসুস্থতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ভারী কোনো কাজ করতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে অটোরিকশা কিনে দেন হেনা বেগম। কিন্তু কিস্তির টাকা পরিশোধের পর পরিবারের খাবারের জোগান আর ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো কঠিন হয়ে যায়। দিশেহারা হয়ে পড়েন হেনা বেগম।

অভাব-অনটন নিয়ে স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই বাগবিতণ্ডা হতো। এরই সূত্র ধরে অভিমান করে একদিন চলে যান বাবার বাড়ি। পরে এক আত্মীয়ের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেন অটোরিকশা চালানোর। সেখানেই রপ্ত করেন রাস্তায় অটোরিকশা চালানোর সব কলা-কৌশল। আবার এনজিও থেকে নেন ঋণ। সে টাকা দিয়ে পুরোনো একটি অটোরিকশা কিনে চালানো শুরু করেন।

ডেমড়া-কালিগঞ্জ সড়কসহ রূপগঞ্জের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সড়কে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন হেনা বেগম। প্রথম প্রথম ভয়ে হাত কাঁপলেও সময়ের ব্যবধানে সব সামলে নিয়েছেন। তিনি এখন একজন দক্ষ অটোচালক।

হেনা বেগম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ এলাকার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অটোরিকশা চালান হেনা বেগম। এতে দৈনিক আয় হয় ৬০০-৮০০ টাকা। তবে আয়ের বড় অংশ চলে যায় পুরোনো অটো মেরামত কাজে। হেনা বেগমের প্রত্যাশা, একটি নতুন অটোরিকশা পেলে ভালোভাবে চলতে পারতেন।

জীবনসংগ্রামী হেনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বামীর আয়ে ছেলে, শ্বশুর, শাশুড়িসহ পাঁচজনের সংসারে একবেলা আধাবেলা খাবার জুটতো না। খেয়ে না খেয়ে কতদিন থাকা যায়। তাই বাধ্য হয়েই এ পেশা বেছে নিয়েছি। প্রথম প্রথম যাত্রী কম উঠলেও এখন সমান তালেই যাত্রীরা আমার অটোতে আসা-যাওয়া করে। প্রতিদিন ৬০০-৮০০ টাকা রোজগার হয়।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আয়ের বেশকিছু অংশ পুরোনো অটো মেরামতেই খরচ হয়ে যায়। তার ওপর কিস্তির টাকা পরিশোধের চাপ। একটি নতুন অটোর ব্যবস্থা হলে সংসার নিয়ে আরও ভালোভাবে চলা যেতো।’

বাবুল মিয়া নামের একজন অটোরিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের এখানে হেনা আপাই একমাত্র নারী অটোচালক। তিনি খুব সাবধানে দক্ষতার সঙ্গে যাত্রী পরিবহন করেন। তাকে আমরা সবসময় সহযোগিতা করি।’

যাত্রী আক্তারুজ্জামান মোল্লা বলেন, ‘আমি অনেকবার তার অটোতে চড়েছি। তিনি খুব সাবধানতার সঙ্গে অটো চালান। তার এ পেশাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।’

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আব্দুল কাউয়ুম বলেন, ‘হেনাকে আমরা বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করে আসছি। অদূর ভবিষ্যতেও তার সহযোগিতায় পাশে থাকবো।’

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইসরাত জাহান ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, উনি আমাদের দপ্তরে যোগাযোগ করলে তাকে ক্ষুদ্র ঋণ কিংবা ঘরে বসে আয় করতে চাইলে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া হবে। যাতে তিনি স্বাবলম্বী হতে পারেন।

এসআর/জেআইএম

Read Entire Article