বয়স মাত্র ছয় বছর। পড়ছে প্রথম শ্রেণিতে। অথচ এই বয়সেই তার ধ্যানজ্ঞান ফুটবল। তার কচি পায়ে ফুটবল কসরত মুগ্ধ করে যে কাউকে। ড্রিবল, পাস, কিংবা গোল করার স্টাইল দেখার মতো।
ছোট্ট এই শিশুটির নাম সোহান। বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাড়ে পাঁচআনী গ্রামে। ভোরবেলা যখন ঘুমে ডুবে থাকে আশপাশের সব শিশু, তখন সোহান ফজরের নামাজ পড়ে ছুটে যায় মাঠে—ফুটবল প্র্যাকটিস করতে। তার স্বপ্ন—একদিন দেশের জার্সি গায়ে খেলবে। হবে মেসির মতো একজন তারকা ফুটবলার।
‘সোহানের বাবার সামর্থ্য নেই ছেলেকে ভালো একটি ক্লাবে ভর্তি করানোর। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত সোহানকে ভালোভাবে পড়াশোনা ও খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। একটু সাপোর্ট পেলে সে একদিন বড় খেলোয়াড় হবে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সোহানের ফুটবল খেলার ভিডিও। বল পায়ে তার ড্রিবল, পাস, কিংবা গোল করার স্টাইল যেন প্রমাণ করে প্রতিভা শুধু শহরের একাডেমি থেকেই জন্মায় না, গ্রামীণ ধুলোমাটিতেও জন্ম নেয় রত্ন।
সোহানের বাবা সোহেল প্রধান পেশায় সাইকেল মেকানিক। দিনমজুরির টাকায় কোনো রকমে চলে সংসার। জুতা তো দূরের কথা, সোহানের কোচিংয়ের খরচ চালানোই কষ্টকর। তবু সন্তানের চোখে ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখে দিনশেষে কষ্ট ভুলে যান এই বাবা।
‘আমরা যদি একটু এগিয়ে আসি, হয়তো একদিন এই শিশুই লাল-সবুজের পতাকা হাতে মাঠ কাঁপাবে বিশ্বমঞ্চে। শিশুটি সত্যিকারের প্রতিভাবান। বিষয়টি ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করছি। তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব।’
‘জুতা কিনে দিতে পারি না, তবু স্বপ্ন দেখি আমার ছেলে দেশের হয়ে খেলবে’—আবেগভরা কণ্ঠে বলেন বাবা সোহেল প্রধান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণে আমি একা কিছু করতে পারবো না। সোহানের জন্য সবার এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমার আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।’
- আরও পড়ুন
- ইনজুরিতে পড়ে শুরুতেই মাঠ ছাড়লেন মেসি
- বাঁচা-মরার ম্যাচে খেলতে পারবেন না মেসি
- মেসির পর এবার নিষিদ্ধ তার দেহরক্ষী
- ভারতে আসছেন মেসি, কোহলি-ধোনিদের সঙ্গে খেলবেন ক্রিকেট!
আলাপচারিতায় সোহান জাগো নিউজকে বলে, ‘ফুটবল খেলতে আমার ভালো লাগে। আমি দেশের হয়ে খেলতে চাই। মেসির মতো ফুটবলার হতে চাই।’
স্থানীয়রা বলছেন, সোহান কেবল সাড়ে পাঁচআনী গ্রামের নয়, সে পুরো দেশের সম্পদ। একটু সাপোর্ট পেলে যেতে পারে অনেক দূর।
স্থানীয় মোবারক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সোহানের বাবার সামর্থ্য নেই ছেলেকে ভালো একটি ক্লাবে ভর্তি করানোর। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত সোহানকে ভালোভাবে পড়াশোনা ও খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। একটু সাপোর্ট পেলে সে একদিন বড় খেলোয়াড় হবে।’
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমরা যদি একটু এগিয়ে আসি, হয়তো একদিন এই শিশুই লাল-সবুজের পতাকা হাতে মাঠ কাঁপাবে বিশ্বমঞ্চে। শিশুটি সত্যিকারের প্রতিভাবান। বিষয়টি ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করছি। তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব।’
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘সোহান শুধু চাঁদপুর নয়, পুরো দেশের সম্পদ। সোহানের ফুটবল কসরত দেখতে আমি ও জেলা ক্রীড়া অফিসার তার বাড়িতে যাবো। সোহানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো। যদি কোনো সাপোর্ট প্রয়োজন হয় অবশ্যই আমরা সব ধরনের সাপোর্ট করবো।’
এসআর/জিকেএস