মেহেরপুরে গাড়ল-দুম্বার সংকরায়ণে নতুন জাত উদ্ভাবন

3 weeks ago 8

গাড়লের সঙ্গে দুম্বার সংকরায়ণ ঘটিয়ে নতুন জাতের দুম্বা উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদা গ্রামের আসাদুজ্জামান। তার খামারে বর্তমানে ৮০টি মা গাড়ল ও বেশ কিছু দুম্বা রয়েছে।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চার বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরি। হাতে সামান্য সঞ্চয় ছিল। মনে কিছু করার তীব্র ইচ্ছা ছিল। প্রথমে গাড়ল জাতের ভেড়ার খামার করলেও ধারাবাহিক লোকসানে মনোবল ভেঙে যায়। কিন্তু হাল না ছেড়ে নতুন পথ খুঁজতে থাকি। একদিন নাটোর থেকে দুটি মরুভূমির দুম্বা কিনে আনি। যা হয়ে ওঠে স্বপ্ন পূরণের মূল চাবিকাঠি।’

তিনি বলেন, ‘দুটি দুম্বার সঙ্গে স্থানীয় গাড়লের সংকরায়ণ করি। ফলাফল দেখে অবাক হয়ে যাই। মাত্র তিন মাসে ৩০–৪০ কেজি ওজনের বাচ্চা! দ্রুত বেড়ে ওঠা, রোগবালাই কম, আর আকারে আকর্ষণীয়, সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা। প্রথম পরীক্ষায় সফল হওয়ায় শুরু হলো বৃহৎ পরিসরে প্রজনন। আজ খামারে রয়েছে ৮০টির বেশি গড়ল ও বেশ কিছু দুম্বা।’

তিনি বলেন, ‘প্রচলিত ছাগল বা ভেড়ার তুলনায় ক্রস জাত অর্ধেক সময়ে বাজারজাত করার মতো ওজনে পৌঁছে যায়। এর মানে, কম খরচে বেশি মুনাফা। এক বছরে ৮০টি ক্রস বাচ্চা বিক্রি করেছি। যা থেকে আয় হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। শুধু মাংস নয়, বাচ্চা বিক্রিও হয়ে উঠেছে লাভজনক ব্যবসা।’

এ খামারি বলেন, ‘চরণভূমির কাঁচা ঘাস, লতা-পাতা, বিচালি, গম ও ভুট্টার ভুসি খেয়ে বেড়া ওঠা ক্রসের বাচ্চা দেখতে নাদুস-নুদুস। রয়েছে ছোট্ট একটি লেজ, পেছনের অংশ চ্যাপ্টা, কারো মাথায় আছে শিং। তার এ নতুন জাতের উদ্ভাবন এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।’

মেহেরপুরে গাড়ল-দুম্বার সংকরায়ণে নতুন জাত উদ্ভাবন

তিনি বলেন, ‘তবে পথটা সহজ ছিল না। ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেও লাভ হয়নি। কাগজপত্রের জটিলতায় সহায়তা মেলেনি। কোনো সরকারি সহযোগিতা ছাড়া নিজের শক্তি ও মনোবল দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন পুরো প্রক্রিয়া।’

মেহেরপুর গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোতালেব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুম্বা-গাড়লের ক্রস জাত মাংস উৎপাদনে একটি মাইলফলক। এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া যায়নি। তাই আমরা অন্যান্য খামারিদেরও উৎসাহিত করছি।’

তিনি বলেন, ‘দুম্বার সঙ্গে গাড়লের বাচ্চা ক্রসিং করার কারণে সামনের দিকটা ভেড়ার মত হলেও পেছনের দিকটা দুম্বার বৈশিষ্ট্য বহন করছে। বাচ্চাগুলো অন্যান্য গাড়লের থেকে বড় ও মাংসের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে অন্যান্য খামারিদের মধ্যে এটি একটি চাহিদা তৈরি করেছে। আসাদুজ্জামান বাচ্চাগুলো বিভিন্ন খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা তার খামার পরিদর্শন করেছি। তাকে সব ধরনের পরামর্শ, ভ্যাকসিন ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছি।’

এআইকিউ/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article