ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র ওমর ফারুক সৌরভকে (২৪) নৃশংসভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মেয়েকে বিয়ে করায় তার চাচা ইলিয়াস আলী শ্যালককে নিয়ে তাকে হত্যা করেন। পরে মরদেহ টুকরা টুকরা করে সেতুর ওপর থেকে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেন। এ ঘটনায় প্রধান আসামি চাচাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন নিহতের চাচা জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মৃত হাসেম আলীর ছেলে ইলিয়াছ আলী (৫৫), তার শ্যালক মৃত আক্তারুজ্জামানের ছেলে আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০), ও মরদেহ বহনকারী গাড়ির চালক জেলার নান্দাইল উপজেলার মৃত মীর হোসেনের ছেলে আব্দুল হান্নান।
মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে সোমবার (৩ জুন) দিনগত রাতে ডিবি ও ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জেলার ধোবাউড়া থানা থেকে অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, রোববার (২ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ সদর ও মুক্তাগাছা সীমান্ত এলাকার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীর পাড়ে রক্তাক্ত বাজারের ব্যাগ ও নদীতে ভাসমান লাগেজ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তারা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাজারের ব্যাগ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মাথা ও লাগেজ থেকে দেহের চার টুকরা উদ্ধার করে ময়মনাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে টুকরা টুকরা মরদেহ উদ্ধারের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিকেলে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই নিহত ওমর ফারুক সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন:
- বাজারের ব্যাগে মাথা, লাগেজে মিললো চার টুকরো মরদেহ
- ময়মনসিংহে উদ্ধার খণ্ডিত দেহটি বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র সৌরভের
- চাচাতো বোনকে বিয়ে করায় সৌরভকে খুন করার হুমকি দিয়েছিলেন চাচা
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন জানান, প্রধান আসামি ইলিয়াস ও নিহত ওমর ফারুক সৌরভ সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা। সৌরভ একই এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি তার চাচা ইলিয়াস আলীর মেয়ে ইভা আক্তারকে গত ১২ মে গোপনে বিয়ে করেন। তবে, এর তিন বছর আগেও ইভা আক্তারের অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। তাদের বিয়ের বিষয়টি ইভার মা-বাবা জানতে পেরে চরম ক্ষিপ্ত হন। ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইলে সৌরভকে টুকরা টুকরা করে হত্যার হুমকি দেন ইলিয়াস আলী। পরে ১৬ মে ইভা আক্তারকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন তার বাবা-মা। সন্তানদের গোপনে বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়।
এ অবস্থায় শনিবার (১ জুন) বিকেলে সৌরভ ময়মনসিংহে আসেন। তিনি তার চাচাতো ভাই মৃদুলকে (১৭, আসামি ইলিয়াসের ছেলে) ফোন দিলে সে নগরীর গোহাইলকান্দি (প্রাইমার স্কুল সংলগ্ন) বাসায় আসতে বলে। সৌরভ বাসায় যেতেই চাচা ইলিয়াস আলী বাসার নিচতলায় একটি কক্ষে নিয়ে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখেন। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুককে ফোন করে বাসায় ডেকে নিয়ে আসেন ইলিয়াস আলী। একপর্যায়ে দুজন মিলে সৌরভকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে টয়লেটে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন।
মরদেহ গুম করার জন্য নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এসে লাগেজ, পলিথিন ও হ্যান্ড গ্লাভস কিনে বাসায় নিয়ে যান। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও দুই পায়ের ঊরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে রাখেন। মাথাটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিংব্যাগে ভরে রাজারের বাজারের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন তারা। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আব্দুল হান্নান নামের একজনের প্রাইভেটকার ভাড়া করেন। ওই গাড়ির ব্যাক ডালার ভেতরে লাগেজে ভরা টুকরা টুকরা মরদেহ নিয়ে মনতলা ব্রিজের ওপর থেকে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
নিহত ওমর ফারুক সৌরভ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি সপরিবারে রাজধানীর মতিঝিল পোস্টাল কলোনি এলাকায় বসবাস করতেন। সৌরভ ঢাকার প্রেসিডেন্সি ইউনির্ভাসিটিতে বিবিএ পড়তেন।
মঞ্জুরুল ইসলাম/এসআর/এমএস