মেয়েদের হলে ভোট দিয়ে ফের লাইনে দাঁড়ানোর অভিযোগ বাগছাস নেতার

6 hours ago 3

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে মেয়েদের হলগুলোতে ভোট দিয়ে এসে ফের লাইনে দাঁড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।

তিনি বলেছেন, বিশেষ করে মেয়েদের হলে আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা ভোট দিয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে তারা মানুষকে ম‍্যানিপুলেট করছেন। বারবার বলছে, ব্যালট পেপার মুখস্থ করাচ্ছেন। এ জিনিসগুলো হচ্ছে। কিন্তু আমরা যখন কেন্দ্রে ঢুকতে যাই তখন আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা চারটা কেন্দ্রে ফিরে এসেছি।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ জানান তিনি।

আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে জানতে পারি ভোটগণনার ওএমআর মেশিন একজন জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে এবং ব্যালট পেপার প্রিন্ট করা হয়েছে সেটাও জামায়াতের আরেক নেতার প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে কথা হলে আমাদের জানানো হয় সমস্যা হবে না। পরে রাত ২টার দিকে আমাদের জানানো হয় ভোট গণনা ওএমআর মেশিনে নয়, ম্যানুয়ালি হবে। রাত দুইটার সময় নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় যে পোলিং এজেন্ট থাকতে পারবে।

কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমরা জানতাম কোনো পোলিং এজেন্ট রাখা যাবে না। ভোটগ্রহণ লাইভ টেলিকাস্ট করা হবে। অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী বা যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা কম তারা কিন্তু সে জায়গা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। আবার আমরা আজকে সকালবেলা যখন বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে যাই সেখানে গিয়ে দেখতে পারি, ভোটকেন্দ্রের দরজা ঘেঁষে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। অলরেডি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখেছি এ লিফলেট বিলির সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের প্যানেল জড়িত এবং ওইখানে হলের যে রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার তারা এগুলো দেখছেন। কিন্তু কিছু বলছেন না। অভিযোগ দিলে বলে দেখতেছি, কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

সিয়াম বলেন, বিশেষ করে মেয়েদের হলে আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা ভোট দিয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। লাইনে দাঁড়ায়ে তারা মানুষকে ম্যানিপুলেট করছেন। বারবার বলছেন, ব্যালট পেপার মুখস্থ করাচ্ছেন। এগুলো হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু কেন্দ্র নয়, যেখানে অন্যান্য প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে আছে সেখানেও আমাদের যেতে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা জানতাম ভোটার তালিকায় সমস্যা থাকায় তাজউদ্দিন আহমেদ ও বঙ্গমাতা হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। পরে দেখি রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলেই অনেকে ভোট দিতে পারছেন। এসব বিভ্রান্তির জন্য অনেক প্যানেলের সমর্থকরা ভোট দিতে আসেননি। এতে অনেক প্রার্থী ভোট বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা দেখেছি, হলে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের প্রার্থী কেন্দ্র পর্যন্ত চলে গেছেন। বঙ্গমাতা হলের দোতালা উঠে গেছেন। কিন্তু আমরা অনুমতি নিয়েও ঢুকতে পারিনি।

এবারের নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

ছাত্রদের হলের মধ্যে আল বেরুনী হলে ভোটার ২১০ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৩৩, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৮, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৫২২, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫, জাতীয় কবি নজরুল হলে ৯৯২ এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন ভোটার রয়েছেন।

ছাত্রীদের হলের মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩, সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১, রোকেয়া হলে ৯৫৬, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৭৯৮ এবং তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন ভোটার রয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনে বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে মোট আটটি প্যানেল অংশগ্রহণ করছে। ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ১০টি হল মিলিয়ে মোট ২১ ভোটকেন্দ্র।

ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনে ৬৭ জন পোলিং অফিসার (শিক্ষক) এবং ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার (কর্মকর্তা) নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ভোট গণনা করা হবে।

নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৫০০ পুলিশ, সাত প্ল্যাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্ল্যাটুন আনসার ক্যাম্পাসের পরিসীমায় মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে যে কোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় আনসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন।

কেআর/এমএএইচ/জেআইএম

Read Entire Article