রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মোদি সরকারের সঙ্গে ‘পারস্পরিক বোঝাপড়া’ না থাকলেও ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কাল্লাস এবং বাণিজ্যবিষয়ক প্রধান আলোচক মারোস শেফকোভিচে এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ইউরোপ তাদের কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা জোরদার করতে চাইছে। মূলত প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, বাণিজ্যসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আরও নিবিড় সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে চায় তারা।
নয়াদিল্লি-মস্কো সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগোতে চায় তারা।
ইইউর বিবৃতিতে বলা হয়, সমগ্র বিশ্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত হুমকির জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও দ্রুত বদল আসছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা। তারা আরও জানিয়েছে, ভারতের উচিত রাশিয়াকে সাহায্য করা বন্ধ করে দেওয়া। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ মোকাবিলা করার সব দিক নিয়ে তারা ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে বিবৃতিতে।
সম্প্রতি ভারতীয় বাহিনী বেলারুশে রাশিয়ার ‘জাপাদ’ (পশ্চিমা) সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়, যা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের একটি মহড়া ছিল। ওই যৌথ সামরিক মহড়ায় ৬৫টি বাহিনী পাঠিয়েছে ভারত। কিছুদিন আগে চীন সফরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মোদি। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সার্বিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ইউরোপের। ভারত প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখ্য কূটনীতিক কাজা কালাস বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ, তেল কেনা, সম্পর্ক আরও গভীর করা—সবই আমাদের সহযোগিতার পথে প্রতিবন্ধকতা।
তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায় না ইউরোপ। কালাসের মতে, ভারতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হলে ইউরোপের শত্রুরাষ্ট্রগুলো সেই শূন্যস্থান পূরণ করার সুযোগ পেয়ে যাবে। যেটি দিতে চাইছে না ইউরোপ। কালাস বলেন, আমরা কি এই শূন্যস্থান অন্য কাউকে পূরণ করার জন্য ছেড়ে দেব, নাকি নিজেরাই সেটা পূরণ করার চেষ্টা করব?
মূলত, আমেরিকার কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী চাইছেন, তা স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন তিনি এবং তার প্রশাসন। সম্প্রতি ট্রাম্প নিজেই ভারতের প্রসঙ্গে সুর নরম করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আদৌ সহজ ছিল না। শুল্কের জন্য যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা কাটানোর জন্য তার প্রশাসন ভারতের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলতে চান, সে কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার দিল্লিতে এসে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনাও করে গেছে আমেরিকার প্রতিনিধিদল।
একদিকে যখন বাণিজ্য নিয়ে এই আলোচনা চলছে, অন্যদিকে ভারতের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের জন্য ইউরোপকে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত শুক্রবারও এ বিষয়ে জি৭ গোষ্ঠী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ তৈরি করেছে আমেরিকা। তারা চায়, জি৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য চীন ও ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ করুক। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বুধবারের বিবৃতিতে এটাও স্পষ্ট যে, কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও ভারতের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বকে নষ্ট করতে চায় না।
ইইউর একজন শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কাল্লাস রাশিয়ার মহড়ায় ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যখন ভারত ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চাইছে, তখন এমন একটি মহড়ায় কেন অংশ নিচ্ছে, যা ইইউ দেশগুলোর জন্য হুমকি?
তিনি আরও বলেন যে, এ ধরনের মতপার্থক্যগুলো দুপক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তবে ইইউ ভারতকে পুরোপুরি রাশিয়ার দিকেও ঠেলে দিতে চায় না।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান