ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে তল্লাশিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের উত্তেজনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার ৯ দিন পর ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছাত্রাবাস খুলে দেয় কলেজ প্রশাসন। এদিন পাঠদান কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন কলেজের অ্যাকাডেমিক ইনচার্জ ও সহযোগী অধ্যাপক (সিএসই) আবদুর রউফ।
তিনি বলেন, কলেজের তিন বিভাগে অন্তত ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রশাসনিক কাউন্সিলর সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকে আবাসিক ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের অনতিবিলম্বে ছাত্রাবাস ও অন্যান্য শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মুচলেকাসহ অঙ্গিকারনামা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজকে থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যায়। অনেকের বাড়ি দেশের বিভিন্ন উপজেলায়। আজকে ছাত্রাবাস খুললেও দূর-দূরান্তের অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে ফেরেনি। ফলে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।
শিক্ষার্থী মো. আরাফাত বলেন, ছাত্রাবাস বন্ধ রাখার কয়েকদিন পর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে অনেকে ইচ্ছে করে প্রথমদিন পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। কলেজে আর কখনো উত্তেজনা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটুক, সেটাই আমরা চাই।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন, কলেজের শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আবারও কোনো শিক্ষার্থী কলেজের শৃঙ্খলা নষ্টের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে কলেজে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছে ও ছাত্রাবাসে দেশীয় অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগরের নেতাকর্মীরা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রাবাসে কলেজ প্রশাসন তল্লাশি চালাতে গেলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভায় ঘটনা ও অভিযোগের বিষয় তদন্তে প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভায় জেনারেল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। এরমধ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর কলেজ প্রশাসন ছাত্রাবাস থেকে রামদা ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কলেজের প্রশাসনিক কাউন্সিলে ঘটনায় সম্পৃক্ততা ও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া আরও পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার উপযুক্ত জবাব ও মুচলেকা দিতে বলা হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পারিজাত মহাজন, জয় বিশ্বাস, ঋদ্ধি বড়ুয়া, আকতাব কাদির ও তার ভাই আকসাদ কাদির, রাকিবুল ইসলাম, এস এম শামারুখ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এইচ এম জাহিন মাহমুদ, মো. নাইমুল ইসলাম ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্ময় পলক।
এছাড়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বাসেত, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মানিক সাহা, রাকিবুল হাসান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোকারম হোসেন ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাব উদ্দিন চৌধুরীকে মুচলেকা দিতে বলা হয়েছে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/আরএইচ/এমএস