ময়মনসিংহে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় আড়তে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। এ কারণে তারাও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তবে মুরগির দাম কমেছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে মাছের কমতি নেই। ছোট-বড় সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেশি রাখায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অনেকে বেশি পরিমাণ মাছ নিতে এসে কিনছেন কম। তুলনামূলক দাম কিছুটা কম হওয়ায় পাঙাশ নিয়েই বাড়ি ফিরছেন অনেকে।
বিক্রেতারা জানান, মাছভেদে দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে বেশি বেড়েছে দেশি ছোট মাছের দাম। বর্তমানে দুই কেজি ওজনের রুই ও কাতলা ২৫০, দুই কেজি ওজনের সিলভার কার্প ১৮০, বিভিন্ন আকারের বাউশ ২৮০-৩০০, মৃগেল ২১০-২৩০, তেলাপিয়া ১২০-১৮০, ট্যাংরা ৩০০-৪০০, পাঙাশ ১৩০-১৪০, শোল ৫০০-৫৫০, শিং ৪০০-৪৫০, টাকি ৩৫০-৪০০, রাজপুঁটি ১৬০-১৭০, দেশি পুঁটি ১৯০-২০০, পাবদা ২০০-২৫০ ও মলা ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছবিক্রেতা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরা আড়তদারের কাছে থেকে মাছ কিনে এনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। সরবরাহ কমেছে কথা বলে আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরাও বাধ্য হয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছি।’
মাছের আড়তদার ফারুক হোসেন বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ায় মাছের সরবরাহ কমেছে। তাই দাম একটু বাড়লেও কিছুদিনের মধ্যে সরবরাহ বেড়ে মাছের দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে।’
দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ আছে কিনা জানতে কথা হয় সদরের সাবকাচারি এলাকার মৎস্যচাষি ওয়াকিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাষিরা নিয়মিত পাইকারদের কাছে মাছ বিক্রি করি। ঠান্ডায় মাছ বড় হয় কম। তাই মোটামুটি বিক্রির উপযোগী মাছগুলো দ্রুত বিক্রি করা হচ্ছে। নিজেদের পকেট ভারী করতেই বাজারে দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে।’
মেছুয়া বাজারে সবজি বিক্রি করেন আকরামুল ইসলাম। তিনি বলেন, সবজির কোনো ঘাটতি নেই। ভোর থেকে প্রচুর সবজি বাজারে আসছে। ফলে ন্যায্য দামে কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
- আরও পড়ুন
- খুলনায় নাগালে সবজি, চড়া চালের বাজার
মাছ ও সবজি কেনা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘সবজির দাম স্বাভাবিক থাকলেও মাছের দামে হতাশ বিক্রেতারা। তিন কেজি মাছ কিনতে এসে দাম বাড়ার কারণে এক কেজি কিনতে হয়েছে। বাজারে মাছের অভাব নেই। বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
তবে স্বস্তি রয়েছে সবজির বাজারে। এই বাজারে গাজর ২০, টমেটো ২০, কাঁচামরিচ ৪০, মুলা ১০, বরবটি ৫০, শসা ৩০, বেগুন ২০, শিম ১০ ও মিষ্টিকুমড়া ২০, করলা ৪০ টাকা কেজি, মটরশুঁটি ৫০ ও কচুরলতি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকা ও ফুলকপি ১০ টাকা পিস, ডাঁটা ও লেবু ১০ টাকা হালি এবং লাউ ৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। হল্যান্ড বড় আলু ১৬ টাকা ও দেশি ছোট আলু ১৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কেজিতে ১৫ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। ২০ টাকা কমে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। আর ২০ টাকা কমে সাদা কক বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। তবে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে লাল কক মুরগির দাম। লাল কক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। লেয়ার ৩৫০, গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম ৪৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম ও দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে চালের দাম। ২৫ কেজির নাজিরশাইল এক হাজার ৮৫০ টাকা, বিআর পুরাতন ২৮ ও ২৯ জাতের চাল এক হাজার ৬০০, কাটারী এক হাজার ৮৫০, স্বর্ণা এক হাজার ৩৫০, চিনিগুঁড়া দুই হাজার ৫০০ এবং চিনিগুঁড়া উন্নত তিন হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাদ্দাম হোসেন নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘এক চিকিৎসকের প্রাইভেটকার চালিয়ে যা বেতন পাই তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। অথচ বিভিন্ন অজুহাতে বিক্রেতারা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজনের কথা কেউ চিন্তা করে না। নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করেন। বাজারে সিন্ডিকেট করা হচ্ছে কিনা তদারকি করা হবে।
এমডিকেএম/এসআর/জিকেএস