যখন নিজেই জানেন না আপনি অন্তঃসত্ত্বা

1 week ago 13
সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা হলে মায়ের মধ্যে বমি হওয়া বা পেট স্ফীত হওয়ার মতো স্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়। আর এসব লক্ষণ ছাড়াই বাচ্চা হওয়াকে ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি বা রহস্যময় অন্তঃসত্ত্বা বলা হয়। ক্রিপটিক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা এমন এক রহস্যময় গর্ভাবস্থা যখন একজন নারী নিজেই জানতে পারেন না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এটা তারা কেবল তখনই বুঝতে পারেন, যখন তাদের প্রসবের সময় আসে। আরও পড়ুন : ওজন বেশি! বুঝবেন কীভাবে আরও পড়ুন : মানুষ কেন পরচর্চা করতে ভালোবাসে? ওই নারীর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কোনো লক্ষণ থাকে না, এমনকি তাদের গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসতে পারে। অনেক সময় প্রেগনেন্সি কিট ঠিকমতো ব্যবহার না করার কারণেও ভুল তথ্য দিতে পারে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে প্রতি আড়াই হাজার প্রসবের মধ্যে একটি হলো ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি। এভাবে ব্রিটেনে বছরে অন্তত তিনশ গর্ভাবস্থাই থাকে রহস্যময়। ক্রিপটিক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়েদের সঠিকভাবে মাসিক হয় না। অনেক সময় ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বা অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থার কারণে রক্তপাত হতে পারে, যাকে অনেকেই মাসিক বলে ভুল করেন। ক্রিপটিক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার ঝুঁকি কাদের? ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, ক্রিপটিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি কয়েকটি কারণে থাকতে পারে।  ১. সম্প্রতি সন্তান জন্মদান: সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে একজন মায়ের মাসিক ফিরে আসতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে এবং তিনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে তার ডিম্বস্ফোটন নাও হতে পারে। এটি মিথ্যা ধারণার জন্ম দিতে পারে যে তিনি গর্ভবতী হবেন না। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কখন মায়ের ডিম্বস্ফোটন হবে এবং তিনি কবে আবার উর্বর হয়ে উঠবেন তা আগে থেকে বলা কঠিন। ২. পিসিওস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম): পিসিওস-এ আক্রান্তদের পিরিয়ড হয় অনিয়মিত। যেহেতু পিরিয়ড না হওয়া তাদের জন্য স্বাভাবিক, তাই তারা তাদের পিরিয়ড মিস করলে বুঝতে পারেন না যে তারা অন্তঃসত্ত্বা। ৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার: যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন তারা ভুল করে ভাবতে পারেন যে তারা গর্ভাবস্থা থেকে সুরক্ষিত। এমনকি সঠিকভাবে ব্যবহার করলেও ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে। ৪. পেরিমেনোপজ: যাদের বয়স ৮০-এর কোঠায় তারা ভাবতে পারেন যে, সন্তান ধারণ করার ক্ষেত্রে তাদের বয়স অনেক বেড়ে গিয়েছে। এজন্য তারা যদি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান, অনেক সময় তারা তাদের গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলোকে মেনোপজের লক্ষণ ভেবে ভুল করেন। ৫. কখনো গর্ভবতী হননি: আপনি যদি আগে কখনো অন্তঃসত্ত্বা না হয়ে থাকেন, তাহলে অন্তঃসত্ত্বা হলে কেমন লাগে তা জানার সম্ভাবনা কম। এ কারণে গর্ভাবস্থা দীর্ঘ সময়ের জন্য অজানা থাকতে পারে। ক্রিপটিক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার জটিলতা ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, আপনি যে অন্তঃসত্ত্বা তা না জানাই ক্রিপটিক গর্ভাবস্থার নানা জটিলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর মধ্যে কয়েকটি জটিলতা হলো: গর্ভকালীন যত্নের অভাব: গর্ভাবস্থা সম্পর্কে অজানা থাকার কারণে একজন মায়ের গর্ভবতী থাকাকালীন যে যত্নের প্রয়োজন তারা সেটা পান না। তারা নিজেরাও স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় চলার ব্যাপারে সচেতন হন না। এই দু'টি কারণে ভ্রূণের বিকাশে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জীবনযাত্রায় সামঞ্জস্য: গর্ভাবস্থায় সিগারেট খাওয়া, মদ পান বা বিভিন্ন ওষুধ খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। কোনো নারী যদি না-ই জানেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা, তাহলে তিনি এসব গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হতে পারেন না। উচ্চ ঝুঁকি: গর্ভাবস্থার বিষয়ে না জানার কারণে মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার মতো নির্দিষ্ট অবস্থা নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যত্ন বা পরীক্ষা তারা পান না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা, পুষ্টিগত পরামর্শ, আলট্রাসাউন্ড বা স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য কোনো সহায়তাও পান না। জন্মগত ঝুঁকি: মায়ের ভেতরে থাকা ভ্রূণে বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। কারণ জেনেটিক পরীক্ষা বা অন্যান্য বিষয় মূল্যায়ন করে শিশুর জন্মগত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। আরও পড়ুন : সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ আরও পড়ুন : মাথায় টাক পড়ছে? ৫ অসুখের লক্ষণ হতে পারে চুল পড়া ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ক্রিপটিক গর্ভাবস্থা থেকে জন্ম নেওয়া শিশু প্রিম্যাচ্যুর বা অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার কারণে শিশুর বৃদ্ধি দুর্বল হয়। শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও থাকে। সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক
Read Entire Article