যথাযথ আবেদন না থাকায় সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ আসামির পক্ষে শুনানি হয়নি

4 days ago 8

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে প্রথমদিনের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু এদিন পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করার কথা ছিল সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীর। ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন’ এমন খবরে শুনানি থেকে বিরত থাকেন তিনি।

এসময় তার অধীনস্থ জুনিয়র আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু আদালতে শুনানি করতে এলে যথাযথ আবেদন না থাকায় করতে পারেননি। এ বিষয়ে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, তিনি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের আইনজীবী। তাই আদালত আইনজীবীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে এবং আসামিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের শুনানি শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু শুনানি করতে যান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের পক্ষে। এরপর এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করেন আদালত।

এ সময় শুনানি করার আগে বিচারকদের কাছে শুনানি করতে যে আবেদন দেওয়া হয়, সেটা না থাকায় চিফ প্রসিকিউটর আদালতের নজরে আবেদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন আবেদন না আনার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ক্ষমা চান।

আদালত আইনজীবীকে বলেন, আবেদন ছাড়া কি শুনানি করা সম্ভব? জবাবে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, আদালত চাইলে সম্ভব, যদি অনুমতি দেওয়া হয়, আমি শুনানি করতে চাই। এ সময় আদালত তাকে শুনানি করতে নিষেধ করেন।

সোমবার জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

আসামিরা হলেন— সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম। অন্য একটি মামলায় রিমান্ডে থাকায় আব্দুর রাজ্জাককে এ দিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।

বেলা ১১টায় আসামিদের এজলাসের মধ্যে কাচে ঘেরা একটি অংশে বসতে দেওয়া হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রথমে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্বাচনের নামে প্রহসন, বিডিআর ট্রাজেডির কারণ, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ওপর গণহত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও আয়না ঘর তৈরি, ১১১৯ জনকে বিচার বহির্ভূত হত্যা, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার, শেয়ার বাজার লুট, রাজাকার ট্যাগ দিয়ে দেশের মানুষকে পৃথক করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দিয়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়ায় সুপিরিয়র হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রীদের বিচার করার কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম।

পাশাপাশি জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন ইন্টারনেট বন্ধ করায় বিষয়টি আদালতের সামনে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া টকশোতে সাবেক বিচারপতি মানিকের দেওয়া বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়টিও উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।

একই সঙ্গে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে কীভাবে পুলিশ সেগুলো ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল, সে বিষয়ও তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় শহীদ নাফিসকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশ রিকশাচালককে নাফিসের মরদেহ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছে, সেটিও আদালতকে জানানো হয়। যাত্রাবাড়ীতে এক বন্ধুর সামনে আরেক বন্ধুকে কাছ থেকে পুলিশ গুলি করে, সেটাও উল্লেখ করা হয়।

বিচারকাজ পুরোপুরি শুরু করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতের কাছে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুই মাসের সময় চান। আদালত তাকে এক মাসের সময় দেন। এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত বাকি আসামিদের আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে আদালত আগামী ১৭ ডিসেম্বর ‘সাবমিশন অব ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট’ দেওয়ার আদেশ দেন।

আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ও আত্মীয়-স্বজনদের এজলাস কক্ষে দেখা করার জন্য কিছু সময়ের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে দুপুর দেড়টায় প্রিজনভ্যানে করে আসামিদের আদালত থেকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

Read Entire Article