বিভাগ ও ডিগ্রির নাম পরিবর্তনের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি (এপিপিটি) বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে এলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২১ অক্টোবর থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপরও পরিবর্তনের বিষয়ে বিভাগটির শিক্ষকদের গড়িমসির কারণে বিভাগটিতে সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা দেড়টায় যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে (টিএসসি) সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত বিভাগ ও ডিগ্রির নাম পরিবর্তন না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া বিভাগ ও ডিগ্রি পরিবর্তনের যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে যবিপ্রবি উপাচার্য, সব অনুষদের ডিন ও সব বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেন এপিপিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা ডিন, চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনে সহযোগিতা চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এপিপিটি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসাইন বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের বিভাগের নাম এবং ডিগ্রি ছিল ‘অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি’। কিন্তু যথেষ্ট কর্মক্ষেত্র না থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তখন ডিগ্রির নাম পরিবর্তন করে ‘অ্যাগ্রো প্রসেস অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং’ করা হয়। যদিও আমাদের সিলেবাস পুরোপুরি ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সাজানো হয়েছে; তবু বিভাগের নাম ও ডিগ্রির অসামঞ্জস্যতার কারণে আমাদের প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ও হচ্ছেন।
তিনি বলেন, এর আগে আমাদের সমস্যার কথা বিভাগে জানালে বিভাগ থেকে শুধু আশ্বাস দিচ্ছিল। দুই মাস আগ থেকে বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের যৌক্তিকতার সব ডকুমেন্টস-সহ আবেদন করলেও বাস্তবিক অর্থে কাজের কোনো অগ্রগতি দেখিনি। আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু প্রশাসন শুধু আশ্বাসই দিচ্ছে, কোনো প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি না। দ্রুত আমাদের দাবি পূরণ না করলে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচির দিকে যাবো।
এপিপিটি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিভাগের শিক্ষকরা ও ডিন মহোদয় একাডেমিক কাউন্সিলের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন। আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তবে কোনো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো ক্লাস-পরীক্ষা ও ল্যাবে অংশ নেব না। আমরা প্রত্যাশা করি একাডেমিক কাউন্সিলে আমাদের বিষয়টি উত্থাপিত হবে এবং সময়ের প্রয়োজনে সব শিক্ষক আমাদের সমর্থন দেবেন। এরপরও সমাধান না হলে কঠোরতম আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার বলেন, আমরা একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করেছি। বিভাগের নাম পরিবর্তন তো আমরা করতে পারি না। ইউজিসিতে আমরা আবেদন করবো, আশা করি খুব শিগগিরই শিক্ষার্থীরা সুখবর পাবে। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি তারা যেন ক্লাসে ফিরে যায়। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, প্রক্রিয়া চলমান। একাডেমিক কাউন্সিল শেষে আমরা এটি ইউজিসিতে পাঠাব। সেখানে থেকে অনুমোদন পেলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। আমি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টির সমাধান চায়, তবে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।
উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার কাম একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।