যা বললেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার

4 hours ago 9

আমার বাসা বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে। দোকান থেকে বাসায় যেতে এক মিনিট সময় লাগে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে দোকান বন্ধ করে প্রায় ১৬০ ভরি সোনা ও নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হই।

নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে বাসার সামনে গিয়ে গেটে ধাক্কাধাক্কি করে দারোয়ানকে ডাকতে থাকি। ওই মুহূর্তে পাশের গলি থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা এসে আমাকে ঘেরাও করে। তখনো আমি কিছু বুঝতে পারিনি। একপর্যায়ে তারা আমার ব্যাগ ধরে টানাটানি করলে বাইক ফেলে দৌড় দিই। তখন ওরা বাইক নিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলে। এসময় ব্যাগ ছাড়তে না চাইলে একের পর এক গুলি করতে থাকে।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বনশ্রীতে ছিনতাইকারীর গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত আনোয়ার হোসেন (৪৩)। ভুক্তভোগী আনোয়ারের ভাষ্যে, ছিনতাইয়ের আগে থেকেই গেট ধাক্কাধাক্কি করছিলেন তিনি। তবে দারোয়ানের বউ গেট না খুললে ততক্ষণে ছিনতাইকারীরা চলে এসে গুলি করে সোনার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় দারোয়ানের বউ গেটে তালা লাগিয়ে চাবি ফেলে দেন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সোনা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বাসার গেটের সামনে হোন্ডা রেখে দারোয়ানকে বলি খুলে দিতে। তখন দারোয়ানের বউ পকেট বন্ধ করে দেন। এসময় তিনটি হোন্ডা এসে আমাকে ঘিরে ফেলে। এরপর আমি দৌড় দিই। তখন ওরা বাইক নিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলে। এসময় ব্যাগ ছাড়তে না চাইলে ওরা ৬/৭ টা গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে।

তিনি বলেন, দারোয়ানের বউ পকেট গেট খোলা রাখলে কোনো সমস্যা হতো না। ওরা আমাকে সব দিক থেকে ঘিরে ফেলে। ডাকাতরা আসার আগে নাকি পরে গেট লাগিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগেই লাগিয়ে রেখেছে। ছিনতাইকারী এলে গেটে তালা দিয়ে চাবি ফেলে দেন। তালা খোলা থাকলে আমি বাইক ফেলে রেখেই ভেতরে ঢুকতে পারতাম। তাহলে কোনো সমস্যা হতো না।

এদিকে ব্যবসায়ী আনোয়ারের স্ত্রীও একই অভিযোগ তুলে ধরেন গণমাধ্যমের কাছে। ব্যবসায়ীর স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী বাসার সামনে আসার এক মিনিটও হয়নি গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে আছি। তখন দারোয়ানকে বললাম আপনারা গেট খুলছেন না কেন? চাবি কই? দারোয়ান বলেন চাবি বাড়িওয়ালার কাছে। পরে আমি চাবির জন্য বাড়িওয়ালার দরজায় অনেকবার নক করা হলেও সাড়া শব্দ পাইনি।

আরও পড়ুন

এগুলো করতে করতে বাইরের লোকজন আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমার স্বামী ওদের সঙ্গে ২০ মিনিট যুদ্ধ করেছে। পরে বাড়িওয়ালা এসে গেট খুলে দেয়।

এর আগে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে গুলি করে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামে এক সোনা ব্যবসায়ীর থেকে ১৬০ ভরি সোনা ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা রাত ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়।

এবিষয়ে রামপুরা থানার ডিউটি অফিসার মো. মহসিন বলেন, ‘রাস্তা আটকে এক ব্যক্তিকে হাতে ও পায়ে গুলির ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টহল টিম গিয়েছিল। সেখানে ওসিসহ ঊর্ধ্বতনরা রয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি একজন সোনা ব্যবসায়ী বলে শোনা যাচ্ছে।’

তাকে গুলি করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী। মামলায় ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার রামপুরা থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা। সন্ধ্যায় রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ জাগো নিউজকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এজাহারে ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ১৬০ ভরি সোনা ও নগদ এক লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে করে মোট সাতজন দুর্বৃত্ত ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে। ব্যবসায়ীকে একটি বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে একজন তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

অন্যদিকে, আরেকজন আনোয়ারকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছিল। এ সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাগো মাগো করে চিৎকার করছিলেন এবং ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে বাধা দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তারা আমার ব্যাগ ধরে টানাটানি করলে বাইক ফেলে দৌড় দিই। তখন ওরা বাইক নিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলে। এসময় ব্যাগ ছাড়তে না চাইলে একের পর এক গুলি করতে থাকে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ ও ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের ধরার চেষ্টা চলছে। ব্যবসায়ীরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে মানববন্ধন করেছেন। রাস্তা অবরোধ করেছিলেন, তাদের অনুরোধ করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে।

কেআর/এমএএইচ/

Read Entire Article