যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার প্রতিবাদে লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছে। সেই বিক্ষোভ থেকে সাড়ে চার শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পার্লামেন্ট স্কয়ার এবং হোয়াইট হলে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, রাত ৯টা পর্যন্ত প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থনের অভিযোগে ৪৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগে পাঁচজনসহ অন্যান্য অভিযোগে আরও আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>
- গাজায় অনাহারে ৯৮ শিশুসহ ২১২ জনের মৃত্যু
- নেতানিয়াহুর গাজা দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভ
- ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ‘পরিকল্পনা নেই’ যুক্তরাষ্ট্রের
এর আগে, শনিবার বিকেলে পার্লামেন্ট স্কয়ারে ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামে একটি প্রচার সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে। সেখানে প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার হাতে জড়ো হয় হাজারও মানুষ।
সংগঠনটির এক মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার ও সম্ভাব্য কারাবাসের ঝুঁকি নিয়েই বহুসংখ্যক মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে। (গাজায়) অব্যাহত গণহত্যায় (যুক্তরাজ্য) সরকার যেভাবে জড়িত, তাতে মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত- তারই প্রমাণ এই জনসমাগম।
শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ পার্লামেন্ট স্কয়ারের বাইরের সবুজ চত্বরের পাশে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থকরা পোস্টার হাতে জড়ো হতে থাকেন। তাদের মধ্যে এক নারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, আপনাদের সবারই প্রিয়জন আছে, কিন্তু আপনারা ভুল মানুষকে গ্রেফতার করছেন।
তিনি পার্লামেন্টের দিকে নির্দেশ করে বলেন, ওখানে যান। যারা গণহত্যায় জড়িত, তাদের গ্রেফতার করুন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, রয়্যাল এয়ার ফোর্সের (আরএএফ) প্লেনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সদস্যদের কর্মকাণ্ড ছিল একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি। তা মোটেও সন্ত্রাসবাদ নয়।
তার দাবি, ওই প্লেনগুলোই আসল সন্ত্রাসী। সেগুলো গাজায় গিয়ে শিশুদের হত্যা করেছে।
ওই নারী আরও বলেন, আমি কেবল একটা কাগজের টুকরো ধরে আছি। এ তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে পারে না। বরং ইচ্ছা করে ২০ লাখ মানুষকে অনাহারে রাখা হলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
তবে বিক্ষোভ দমনে পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার। গত সন্ধ্যায় পুলিশের প্রশংসার পাশাপাশি প্যালেস্টাইস অ্যাকশনকে নিষিদ্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
তার ভাষ্যমতে, অনেক মানুষ হয়তো এখনো এই সংগঠনের বাস্তবতা জানেন না। তবে তারা কোনো অহিংস সংগঠন নয়। যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার স্বার্থে ওই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের শুধু পোস্টার হাতে থাকার কারণে গ্রেফতার করার নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্য। তাদের মতে, এটি মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ বলেন, যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অত্যন্ত বিস্তৃত, অস্পষ্ট ভাষায় লেখা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য হুমকি বলে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছি। আমাদের উদ্বেগ যে যথার্থ ছিল এই গ্রেফতারই তা প্রমাণ করে।
গত জুন মাসে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। এর কয়েকদিন পরই এ সংগঠনের কর্মীরা আরএএফ ব্রাইজ নর্টনে অনধিকার প্রবেশ করে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে দুটি সামরিক প্লেন বিকৃত করেন।
নিষেধাজ্ঞার ফলে ২০০০ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, এই সংগঠনের সদস্য হওয়া বা সমর্থন জানানো অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। শুধু তা-ই নয়, এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে।
সূত্র: ইউএনবি
কেএএ/