‘যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা-ইহুদি বিদ্বেষ’ থাকলেই মিলবে না ভিসা

3 weeks ago 4

এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা কাজের অনুমতি পাওয়ার আবেদনকারীদের অতীত কার্যকলাপে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব’ রয়েছে কিংবা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (ইউএসসিআইএস) মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এ ঘোষণা দিয়েছে। নতুন নীতির আওতায় আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ইউএসসিআইএস জানিয়েছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা আবেদনকারীর রেকর্ডে ‘যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা’ কিংবা ‘ইহুদি বিদ্বেষের প্রমাণ’ খুঁজে দেখবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় চলতি বছরের জুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল, তবে এবার সেটিকে সম্প্রসারণ করে সরাসরি‘যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ’ যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটির মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাজেসার এক বিবৃতিতে বলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ঘৃণা করে কিংবা বিরোধী মতবাদ প্রচার করে, তাদেরকে এই দেশের কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না। আমরা আমাদের নীতি ও প্রক্রিয়া এমনভাবে বাস্তবায়ন করব, যাতে এসব কার্যকলাপ চিহ্নিত করা যায় ও কঠোর যাচাই কার্যকর হয়।

তবে নীতিতে ‘যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে, এর মধ্যে ইহুদি বিরোধী সন্ত্রাসবাদ, ইহুদি বিরোধী সংগঠন ও মতবাদ সমর্থন’ অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের (আইএনএ) ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা আছে, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, বিশ্ব কমিউনিজমের সমর্থক, সরকারবিরোধী প্রচারণাকারী কিংবা যারা বলপ্রয়োগে মার্কিন সরকার উৎখাতের পক্ষে, তারা নাগরিকত্ব পাবে না।

এদিকে, এই ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ইরানে সাম্প্রতিক হামলার বিরোধিতা করা বা গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকা কি যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ হিসেবে ধরা হবে? আবার কেউ লিখেছেন, ট্রাম্পকে অপছন্দ করা বা তাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট শেয়ার করলে তার প্রভাব কী হবে?

ইমিগ্রেশন গবেষক অ্যারন রেইকলিন-মেলনিক এক্সে (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রবিরোধিতা শব্দটির কোনো আইনি নজির আগে দেখা যায়নি। এর সংজ্ঞা পুরোপুরি ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে। তার মতে, এটি ১৯৫০ এর দশকের ম্যাকার্থিবাদের মতো, যখন কমিউনিজমের আতঙ্ক ছড়িয়ে বামপন্থিদের দমন করা হয়েছিল।

হিউস্টনের অভিবাসন আইনজীবী স্টিভেন ব্রাউনও মন্তব্য করেন, ‘মার্কিন মূল্যবোধ’ একটি বিষয়ভিত্তিক মানদণ্ড, যা আইএনএতে সংজ্ঞায়িত নয়।

ব্রিগহ্যাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক জেইন লিলি লোপেজ বলেন, এই নীতির ফলে কর্মকর্তারা সহজেই স্টেরিওটাইপ, পক্ষপাত ও গোপন বৈষম্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এটাই সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়। তিনি যোগ করেন, আবেদনকারীদের নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে এখন অতিরিক্ত নথি ও প্রমাণ হাজির করতে হবে।

অভিবাসন নীতির এই কড়াকড়ির অংশ হিসেবে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করেছে। জুনে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, মার্কিন দূতাবাসগুলোকে ভিসা আবেদনকারীদের মধ্যে দেশের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার বা মৌলিক নীতির প্রতি ‘শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব’ আছে কি না, তা যাচাই করতে হবে।

সামগ্রিকভাবে নতুন এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন

এসএএইচ

Read Entire Article