মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ জয়পুরহাট সদরের ছেলে। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডাবল মাস্টার্স করেছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্সে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তার যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশব কেমন কেটেছে?
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: আমার শৈশব কেটেছে জয়পুরহাটের মফস্বল শহরে। সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসেবে বড় হয়েছি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক ও নেতৃত্বমূলক কাজে অংশ নিতে ভালো লাগতো। বাবার ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই কিন্তু আমার ঝোঁক ছিল ব্যবস্থাপনার দিকে। পারিবারিক অবস্থা ছিল মধ্যবিত্ত—যেখানে পরিশ্রম, সততা ও শিক্ষাকেই জীবনের মূল সম্পদ হিসেবে ধরা হতো।
জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: স্কুলজীবন সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে পড়েছি। পড়াশোনায় খুব একটা উজ্জ্বল ছিলাম না। পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে অনেক সময় শুনতে হয়েছে আমি দুর্বল ছাত্র, ভবিষ্যতে কিছু করা সম্ভব নয়। এমনকি একটি বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ-৫ তুলতে পারিনি। তবে এখান থেকেই ধৈর্য, চেষ্টা আর আত্মবিশ্বাস শেখার সুযোগ পেয়েছি। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি জয়পুরহাট সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে। এখান থেকেই উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করি। পাশাপাশি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত ডিপ্লোমা সম্পন্ন করি।
জাগো নিউজ: পড়াশোনা অবস্থায় কী ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল?
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: পড়াশোনার পাশাপাশি সব সময় সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলাম। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এইচআর ক্লাবে কাজ করেছি। যেখানে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও নানা ধরনের কার্যক্রম আয়োজনের অভিজ্ঞতা আছে। এ ছাড়া এয়ার রোভার স্কাউটসের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্যাম্পে অংশ নিয়েছি, বৃক্ষরোপণ, সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে যুক্ত থেকেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেজেন্টেশন ও ইভেন্ট পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমার নেতৃত্ব ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়িয়েছে। এককথায়, একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম থেকেও আমি অনেক বেশি শিখেছি।
আরও পড়ুন
যেভাবে তুরস্কের সরকারি বৃত্তি পেলেন মাইনুল
যুক্তরাষ্ট্রের নক্স কলেজে ৩ কোটির বৃত্তি পেলেন সাদ
জাগো নিউজ: টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিলেন কেন?
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: চাকরিজীবনের শুরু থেকেই আমি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে (এইচআরএম) কাজ করেছি। তবে অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারি, এইচআরএমের সীমাবদ্ধতার বাইরে আরও বৃহৎ দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ আছে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের (এসসিএম) মাধ্যমে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (এসসিএম) খাত বিকাশমান এবং ভবিষ্যতে বিপুল সম্ভাবনা আছে। তাই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচআরএম) থেকে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে (এসসিএম) ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিই। এ ছাড়া একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে জানতে পারি, টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয় সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (এসসিএম) প্রোগ্রামে সমৃদ্ধ, টিউশন ফি তুলনামূলক কম, নিরাপদ পরিবেশ আছে। সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি শক্তিশালী কমিউনিটি আছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে স্থান পাওয়া একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। যা শিক্ষার মান ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। এসব কারণেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বেছে নিয়েছি।
জাগো নিউজ: টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে সুযোগ পাওয়ার গল্প শুনতে চাই—
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নিয়ে গভীরভাবে রিসার্চ করেছি। এরপর ট্রান্সক্রিপ্ট, সিভি ও স্টেটমেন্ট অব পারপাস প্রস্তুত করে অনলাইনে আবেদন করি। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। ইন্টারভিউতে একাডেমিক ও পেশাগত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। যেখানে আমি আমার এইচআর ও কমপ্লিয়েন্স অভিজ্ঞতা এবং সাপ্লাই চেইনে আগ্রহ বিষয়টি তুলে ধরি। ইন্টারভিউ ভালো হয়েছিল। তারা কয়েকদিন বাদে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাঠায়। এরপর আমি ফাইন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট জমা দিই। শেষ পর্যন্ত অ্যাডমিশন কনফার্ম হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ৮০% স্কলারশিপ পেয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত! পরিবারের ওপর চাপ কমেছে এবং নিজের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এটি আমার জন্য বড় অর্জন। স্কলারশিপে টিউশন ফির ৮০% মওকুফ হবে। উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ আছে। আধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি আছে। অন-ক্যাম্পাস পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ আছে।
জাগো নিউজ: টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আবেদন প্রক্রিয়া কেমন?
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: প্রথমে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদনে একাডেমিক ফলাফল, স্টেটমেন্ট অব পারপাস এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা এখানে মূল ভূমিকা রাখে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে যেমন- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, সিভি, স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি), পাসপোর্ট কপি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (ভিসার জন্য), ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস স্কোর, সর্বনিম্ন ৬ বা টোফেল)।
জাগো নিউজ: যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মো. ফয়সাল ইসলাম সবুজ: প্রথমত, একাডেমিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সিভি ও স্টেটমেন্ট অব পারপাসে নিজের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। তৃতীয়ত, সময়মতো আবেদন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া নেটওয়ার্কিং এবং পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়ে। সবচেয়ে বড় কথা—রেজাল্ট সব সময় মনমতো না-ও হতে পারে। তাই বলে মানুষের কথায় থেমে গেলে চলবে না। কী করছি তা প্রচারের প্রয়োজন নেই; সফল হলে পৃথিবী নিজেই তা জানবে।
এসইউ/এএসএম