যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘স্বাধীনতা’র ডাক জার্মানির নতুন চ্যান্সেলরের

2 hours ago 3
জার্মানির নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফলে ফ্রিডরিখ মের্জের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিউ) ও তাদের  শরিক দল ২৮ শতাংশ ছয় শতাংশ ভোট পেয়েছে যা এই নির্বাচনে সর্বোচ্চ। দেশটির পরবর্তী চ্যান্সেলরের দৌড়ে এগিয়ে আছেন ফ্রিডরিখ মের্জ। নির্বাচনে জয়ের পর ফ্রিডরিখ মের্জ ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে মুক্ত করার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন যে, ইউরোপকে একীভূত করে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ অর্জন করা সম্ভব হবে। জার্মানির নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হস্তক্ষেপেরও সমালোচনা করেন তিনি। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফ্রিডরিখ মের্জ নির্বাচনে জয়ের পর একটি টেলিভিশন আলোচনায় বলেছিলেন, আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হবে যত দ্রুত সম্ভব ইউরোপকে শক্তিশালী করা, যাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি।  তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান দেখে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, তাদের ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই। এ ছাড়া মের্জ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ব্যাপারেও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ কোনো অংশেই মস্কোর হস্তক্ষেপের চেয়ে কম নাটকীয়, আগ্রাসী বা অবমাননাকর নয়। আমরা দুই দিক থেকেই চাপের মুখে আছি, আর এ জন্য আমার প্রধান অগ্রাধিকার হবে ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ করা। এই মন্তব্যগুলো এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্ক জার্মানির উগ্র ডানপন্থি দল অল্টারনেট ফর জার্মানিকে (এএফডি) সমর্থন জানান। মাস্কের এই সমর্থন দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল।  এদিকে এএফডি, যে দলটি ‘নব্য-নাৎসি’ হিসেবে সমালোচিত, ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন লাভ করেছে। তবে সিডিইউ এবং অন্যান্য দল তাদের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়নি, যার ফলে এএফডি পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকবে। এএফডির জয়ের পর থেকে জার্মানির রাজনীতিতে উগ্র ডানপন্থি এবং নাৎসি আদর্শের পুনরুত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নাৎসি পার্টি ১৯৪৫ সালে পরাজয়ের পর থেকে জার্মানির রাজনীতিতে এ ধরনের একটি শক্তি কখনোই এত বড় আসন অর্জন করেনি।  তবে, বর্তমান পরিস্থিতি দেখিয়ে দিচ্ছে যে, জার্মানিতে এক নব্য-নাৎসি আন্দোলনের উত্থান ঘটেছে, যা ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ফ্রিডরিখ মের্জ তার বক্তব্যে সাফ জানিয়ে দেন যে, তিনি এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় একীকরণ এবং মার্কিন প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য কাজ করবেন। তার মতে, ইউরোপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কিছুটা কমানো প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন দেশটি এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে যেখানে তার অ্যালাইদের মতামতের প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে। পরবর্তী চ্যান্সেলরের মের্জের দৃষ্টি ও রাজনৈতিক লক্ষ্য   মের্জের এই বক্তব্যে একটি স্পষ্ট দৃষ্টি প্রতিফলিত হচ্ছে, যা শুধু একক দেশ হিসেবে জার্মানি বা ইউরোপের অভ্যন্তরীণ নীতি ও কার্যক্রমের ওপর জোর দিতে চাইছে, বরং আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের পাশাপাশি রাশিয়ারও প্রভাব মোকাবিলা করতে চাচ্ছে। এদিকে, মের্জের এই পদক্ষেপ ইউরোপের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যকার সমন্বয়কে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মের্জের পরিকল্পনা, যদি সফল হয়, তবে এটি ইউরোপীয় রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে অতীতের সরাসরি মার্কিন প্রভাবের পরিবর্তে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজস্ব বৈশ্বিক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল, যা কেবলমাত্র সময়ের সঙ্গে পরিষ্কার হবে। এর আগে নির্বাচনে মের্জের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ২৮.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা তাকে সরকারের নেতৃত্বে আসতে সাহায্য করবে। তবে, এই নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং দলের মধ্যবর্তী সম্পর্কের দিকে লক্ষ রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানির নির্বাচনে এমন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান যা ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত নাৎসি আন্দোলনের এক রূপ হতে পারে, তা ইউরোপীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎকে একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে।
Read Entire Article