ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলন কোন দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নয়। এই পরিস্থিতিতে দেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিনিধিত্বশীল কিছু রাজনৈতিক সংগঠন একত্রিত হয়ে আলাপ আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা সবদিক চিন্তা করে এবং জুলাইয়ের রক্তের প্রতি দায়বোধ থেকে সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো নিয়ে রাজনৈতিকভাবে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা একই দাবি নিয়ে যূথবদ্ধ কর্মসূচি পালন করবো। যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলবো।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনের পরে সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, আমরা ৯০ সালেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যৌথ সংস্কার প্রতিজ্ঞা দেখেছি। নির্বাচনের আগেও বিভিন্ন দল ইশতেহার দেয়। সেগুলোতে সুন্দর সুন্দর বাণী থাকে। কিন্তু তার কোনো আইনি ভিত্তি না থাকায় নির্বাচনের পরে গালভরা সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন আর হয় না। জুলাই সনদ ও সংস্কার প্রতিশ্রুতিই হয়ে থাকবে যদি আইনিভিত্তি নিশ্চিত না করা যায়।
তিনি বলেন, যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের সার্বভৌম এখতিয়ার থাকে। সেই ক্ষমতা ও এখতিয়ার বলে জুলাই সনদকে এই আমলেই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কারণ, অতীতের অভিজ্ঞতায় নির্বাচনের পরে কেউ এসে এটা বাস্তবায়ন করবে সেই আশা করা যায় না। অতএব, দ্রুত সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদকে আইনসম্মত করতে হবে।
ফ্যাসিবাদের বিচার গতি ও বিস্তৃতি নিয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, আওয়ামী লীগ যে মাত্রায় ও পরিমাণে অপরাধ করেছে তা কোনো পথভ্রষ্ট রাজনৈতিক দলের অপকর্ম না বরং মাফিয়াদের মতো সুসংহত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ। ফলে তাদের বিচারটাও সেই বিবেচনায় ও সেই মাত্রায় হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বিচারের মাত্রা ও গতি দেখে আমরা হতাশাবোধ করছি। নামে মাত্র কয়েকজনকে আটক করে বিচার চলছে।
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মূলহোতারা সবাই দেশের বাইরে বসে নানা রকম চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। জেলা ও থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসা কত নির্মম তা কল্পনাও করা যায় না। বর্তমানে বিচারের যে পরিস্থিতি তাতে অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের জীবন ও দেশ হুমকির মুখোমুখি। এমন বাস্তবতায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দাবি করছে যে, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে এবং বাইরে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার ও জাপা নিষিদ্ধের বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপতৎপরতায় জাতি বিষিয়ে ছিল বিগত পনের বছর। তারা ফ্যাসিবাদের সব অপকর্মের পক্ষ নিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদকে বেপরোয়া হতে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ব্যাপারে সবাই অবগত। তারা ফ্যাসিবাদের মন্ত্রীসভায় ছিল। জালিয়াতিপূর্ণ প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নিয়ে অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি অভ্যুত্থানের পরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখন তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার পাঁয়তারা করছে। দেশের একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছে। আমরা বলতে চাই, জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, তারা কোনো স্বাধীন রাজনৈতিক দল নয় বরং তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট।
আরএএস/এনএইচআর/এমএস