যুদ্ধবিরতি নিয়ে উগ্র ডানপন্থিদের চাপে নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার বৈঠক স্থগিত করেছেন। দেশটির এই বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল, যা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত স্বীকৃতি নিয়ে ঘোষণা করা হতো।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদনের এ বৈঠক স্থগিত করা হয়। খবর আল জাজিরা।
বৈঠক স্থগিত করা নিয়ে নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাস শেষ মুহূর্তে কিছু সমস্যা তৈরি করেছে, যার কারণে চুক্তি অনুমোদন করা হয়নি।
বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তারা মনে করেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের দাবি, যদি এই চুক্তি বাস্তবায়ন হয়, তবে তারা বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের জোট ছাড়তে পারেন।
এছাড়াও নেতানিয়াহু সরকার অভিযোগ করেছে, হামাস চুক্তির কিছু শর্ত মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং শেষ মুহূর্তে নতুন কিছু দাবি তুলেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, যতক্ষণ না মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চিত না হন যে হামাস চুক্তির সব শর্ত মেনে নিয়েছে, ততক্ষণ মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে না।
অপরদিকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের প্রতিনিধি জানিয়েছে, হামাস আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। বিশেষত, নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থি রাজনৈতিক জোটের সদস্যদের চাপের মধ্যে রয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সালহুত বলেছেন, হামাস চুক্তি থেকে সরে আসার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং নেতানিয়াহুর সরকারে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব পরিস্থিতি জটিল করেছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পরও ইসরায়েলি সেনারা গাজায় বিমান হামলা চালাতে থাকে। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, বুধবার থেকে শুরু হওয়া বোমাবর্ষণে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৯ জন শিশু এবং ২৪ জন নারী রয়েছেন। এ হামলায় ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নেতানিয়াহুর চরম ডানপন্থি জোট চুক্তি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। ইসরায়েল সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসকে অতিরিক্ত ছাড় দিলে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীণ জোট ভেঙে যেতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন নেতানিয়াহুর মিত্ররা।
চরম ডানপন্থি দলের নেতা বেজালেল স্মট্রিচ যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি এই চুক্তি ইসরায়েলের নিরাপত্তা জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। স্মট্রিচের দল দাবি করেছে যে, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামাস আবার পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে উঠবে।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নেতানিয়াহু তার চরম ডানপন্থি জোটের সদস্যদের খুশি রাখতে চাচ্ছেন, যার ফলে এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্বিত হচ্ছে।