যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গাজা, ইসরায়েলের চারটি দাবি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই। তবে এই পর্বে প্রবেশের আগেই চারটি শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল।
এই চার শর্ত পূরণ না হলে দ্বিতীয় পর্বের বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল কেএএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোহেন এ হুঁশিয়ারি দেন।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কোহেন বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের চারটি শর্ত রয়েছে—
(১) ৭ অক্টোবর এবং তার আগে গাজায় যেসব ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।
(২) গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে গাজা থেকে বিদায় নিতে হবে।
(৩) গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করতে হবে।
(৪) পুরো গাজা এলাকায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
প্রসঙ্গত, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ছয় সপ্তাহের পর্যায় ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়, যার ফলে হামাস-ইসরায়েলের ভয়াবহ যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
সেই হামলার জবাবে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা এই অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল কূটনৈতিক চাপে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ফলে ১৯ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা ফেব্রুয়ারির শুরুতে হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতে গড়িমসি করেন।
এই দ্বিতীয় ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, যুদ্ধের সমাপ্তি এবং বন্দি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এরই ফলে স্থায়ীভাবে সংঘাতের অবসান ঘটবে।
চুক্তির শর্ত অনুসারে, দ্বিতীয় ধাপে হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকা ১ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। পাশাপাশি, ইসরায়েলি সেনারা গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করবে।
তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।
গাজা উপত্যকায় সংঘাত নিরসনে ২০২৪ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তিন স্তরের যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি প্রস্তাব দেন। ১৯ জানুয়ারি থেকে মূলত সেই চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।