রুশ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ডনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাশিয়ার যে কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে ইউক্রেন। এটি ভবিষ্যতে আবার হামলার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন।
শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বৈঠকের আগে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন যে, শান্তি চুক্তিতে ‘কিছু ভূখণ্ড বিনিময়ের’ বিষয়টি থাকতে পারে। ধারণা করা হয়, ডনবাসের যে অংশ এখনো কিয়েভ নিয়ন্ত্রণ করছে তা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে পারেন পুতিন।
অন্যদিকে রুশ বাহিনী তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মতো অগ্রসর হয়েছে।
জেলেনস্কিও এটি স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, এসব জায়গায় হামলায় যারা জড়িত তাদের কিয়েভ ধ্বংস করবে। রাশিয়ার অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি বলেন, এটি পরিষ্কার যে মস্কোর লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই একটা বিষয় প্রচার করা যে রাশিয়া অগ্রসর হচ্ছে আর ইউক্রেন হারছে।
এদিকে শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় ভ্লাদিমির পুতিন কোন কোন দাবি তুলে ধরবেন তা এখনো জানানো হয়নি। ডনবাস-লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া এর একাংশ দখল করে আছে।
মস্কো এখন লুহানস্ক প্রায় পুরোটা এবং দোনেৎস্কের অন্তত ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি বলেন, ডনবাস ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব ইউক্রেন প্রত্যাখ্যান করবে। আমরা যদি আজকে ডনবাস ছেড়ে দেই তাহলে রাশিয়ানদের জন্য হামলার প্রস্তুতির সেতু উন্মোচন করে দেওয়া হবে।
এর আগে তিনি বলেছিলেন ইউক্রেন দখলদারদের তার ভূমি উপহার দেবে না। তিনি একই সঙ্গে দেশটির সংবিধানের কথাও তুলেছেন, যেখানে ভূখণ্ড বিনিময়ের বিষয়ে গণভোটের বিধান আছে। মঙ্গলবার রাতের ভাষণেও জেলেনস্কি বলেছেন মস্কো জাপোরিঝিয়া, পকরোভস্ক ও নভোপাভলভ এলাকায় নতুন করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ভূখণ্ড বিনিময়ের কথা বলার পর কিয়েভসহ ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, মস্কো জোর করেই ইউক্রেনের সীমান্ত নতুন করে নির্ধারণ করতে পারে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের অন্তত ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে হোয়াইট হাউজ মঙ্গলবার জানিয়েছে যে, আলাস্কা বৈঠকে ট্রাম্প শুনবেন এবং একই রুমে বসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কিভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায় তার সেরা ধারণাটা দেবেন। এর আগে ট্রাম্প যা বলেছেন তাতে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে শান্তির কাছে নিয়ে আসার প্রত্যাশা কিছুটা কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে তিনি যখন শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা দেন তখন ট্রাম্পকে ইতিবাচক মনে হয়েছিল যে বৈঠক থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসতে পারে। তবে আলোচনা থেকে কিয়েভের জন্য ইতিবাচক কিছু আসার বিষয়ে আবারও গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। কারণ, ওই বৈঠকে কিয়েভকে রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের বাদ দিয়ে তারা কি আলোচনা করবে জানি না। তিনি আলোচনার জন্য আলাস্কাকে নির্ধারণ করাকে পুতিনের ‘ব্যক্তিগত জয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তার মতে, পুতিন বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তার (পুতিন) সঙ্গে বৈঠক করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এর আগে বলেছিলেন কিয়েভের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমঝোতা হবে ‘মৃত সিদ্ধান্ত’। বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট্টের সঙ্গে জেলেনস্কির ভার্চুয়াল বৈঠক করার কথা রয়েছে।
টিটিএন