যুবলীগ-ছাত্রলীগের পর ছাত্রদল নেতার দখলে, বাড়ি ফিরে পেলেন প্রবাসী

2 months ago 8

২০১১ সালে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকায় ১৫ শতক জমি কেনেন আলম বেগ। পরে সেই জায়গার মধ্যে ৯ শতক জমির ওপর পাঁচতলা একটি ভবন নির্মাণ করেন। পাঁচ ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হওয়ায় একপর্যায়ে আলম বেগও সস্ত্রীক যুক্তরাজ্যে চলে যান।

২০১৮ সালে তার এই বাড়িটি দখলে নেন যুবলীগ নেতা শামীম ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার। অনেক চেষ্টা করেও বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারেননি। নিজের উপার্জিত অর্থে কেনা বাড়িটি বেদখলে যাওয়ার কষ্ট নিয়ে ২০২২ সালে মারা যান আলম বেগ ও তার স্ত্রী।

গতবছর জুলাই বিপ্লবের পর আলম বেগের বড় ছেলে দেশে ফিরে জানতে পারেন, যুবলীগ নেতা শামীম ও ছাত্রলীগ নেতা তুষারের কাছ থেকে বাড়িটি দখলে নিয়েছেন ছাত্রদল নেতা এস এম ফাহিম। এসময় মালিকানার বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে আলম বেগের ছেলে সোহেল বেগ আইনের আশ্রয় নেন। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় সম্প্রতি বাড়িটি দখলমুক্ত হয়।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে বাড়িটি দখলমুক্ত করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সভার আয়োজন করেন বাড়ির মালিক সোহেল বেগের পরিবারের সদস্যরা।

বাড়ির মালিক ও তার স্বজন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে শামীমাবাদ এলাকার ৫ নম্বর রোডের ২১৫ নম্বর বাসাটি দখলে নেন যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ। দখলে নেওয়ার বাসাটির নামফলক ‌‘মাতৃমহল’ পাল্টে ‘হোয়াইট হাউজ’ লেখেন। একইসঙ্গে হোল্ডিং নম্বরটিও পরিবর্তন করে ভাড়াটে তোলেন বাসাটিতে।

যুবলীগ-ছাত্রলীগের পর ছাত্রদল নেতার দখলে, বাড়ি ফিরে পেলেন প্রবাসীঅভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা এস এম ফাহিম

বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেও বাসাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ পালিয়ে গেলে বাসাটির দখল নেন ছাত্রদল নেতা এস এম ফাহিম। ফাহিম সিলেট মহানগর ছাত্রদলের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে আলম বেগের বড় ছেলে সোহেল বেগ দেশে আসেন। তিনি বাসাটির মালিকানার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা ফাহিম তাকে বের করে দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরে তিনি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারেননি। অবশেষে গত ২ জুন তিনি সিলেট কোতোয়ালি থানায় ছাত্রদল নেতা ফাহিমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলায় আসামিরা হলেন সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এস এম হানিফের ছেলে ও সিলেট মহানগর ছাত্রদলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এস এম ফাহিম (২৫), ওসমানীনগর উপজেলার খাপন খালপাড় গ্রামের নুর খানের ছেলে যুবলীগ নেতা শামীম খান (৪১), শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা মৃত মসদ্দর আলীর ছেলে আবুল কাশেম (৪৮), একই এলাকার বাসিন্দা মৃত আনিস আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৪) ও নুর খানের ছেলে তুষার আহমদ। এছাড়া সৈয়দ জুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ জিলহাজ আহমদ নামের দুজনকে আসামি করা হয়েছে।

বাড়ির মালিক সোহেল বেগ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাড়িটি প্রথমে শামীম ও তুষার দখল করে নেয়। তারা আমার বাসায় ভাড়াটে তুলে প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা আদায় করেছেন। দীর্ঘদিন তারা এখানে আস্তানা বানিয়ে রেখেছিলেন। ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের ফাহিম বাড়িটি দখলে নেন। তিনি আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাড়িটি ফিরে পেয়েছি।’

তিনি জানান, তার বাবার কেনা এই বাড়ির পার্শ্ববর্তী আরও ৭-৮ শতক জমিও বেদখলে রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ভাই দখল করে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। ৫ আগেস্টের পর তিনিও পলাতক রয়েছেন। সেই জায়াগটিও দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষের কাছে ফোনে বাসা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি মিটিংয়ে আছি।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, দখলবাজরা এতটাই প্রভাব খাটিয়েছে যে, তার প্রমাণ হলো বাড়ির নামটি পাল্টে ‘হোয়াইট হাউজ‘ রেখেছে।

তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, বাড়ির প্রকৃত মালিক সোহেল বেগ। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাড়িটি দখলমুক্ত করা হয়েছে।

যারা এখনো অবৈধ দখলদার আছেন, তারা নিজ থেকে প্রকৃত মালিকদের কাছে তাদের জমি বুঝিয়ে দেবেন। অন্যথায় আইন প্রয়োগ করা হলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দখল ছাড়তে হবে, জেলও খাটতে হবে বলে জানান পুলিশের এই কমিশনার।

তিনি বলেন, সোহেল বেগের আরও যেসব জমি বেদখলে রয়েছে, সেগুলোও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যারা অবৈধ দখলদার তারা স্বেচ্ছায় না গেলে আইনগত ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় দখলবাজদের ঠেকাতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান পুলিশ কমিশনার।

আহমেদ জামিল/এসআর/এএসএম

Read Entire Article