যে অসাবধানতা হতে পারে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ

2 hours ago 2

 

মুখ বা কথার গুনাহকে মানুষ খুব তুচ্ছ ও কম গুরুতর মনে করে। কিন্তু মুখের অনেক গুনাহ আছে যা জুলুম, বান্দার হক সংশ্লিষ্ট ও গুরুতর যেমন পরনিন্দা, অপবাদ, গালিগালাজ, মানুষের সম্মান নষ্ট করে এমন মন্তব্য ইত্যাদি। এসব গুনাহ বান্দার হকের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় শুধু আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা পাওয়া যায় না যদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষমা না করে। এসব গুনাহ মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও উত্তম আচরণ। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে কোন কাজ? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান (অর্থাৎ এ দুটি অঙ্গের গুনাহ)। (সুনানে তিরমিজি)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে অঙ্গীকার করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত জিহ্বা এবং দুই পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। (সহিহ বুখারি)

উক্ববা ইবনে আমের (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! মুক্তির উপায় কী? তিনি বললেন, তোমার জিভকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিজের ঘরেই সন্তুষ্ট থাকুন, এবং নিজের পাপের জন্য কাঁদুন। (সুনানে তিরমিজি)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি)

মুআজ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে দ্বীনদারির মূল কথা বলব? আমি বললাম, জি বলুন। তিনি নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, এটিকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা কি কথার জন্যও ধরা পড়ব? তিনি বললেন, হায় মুআজ! মানুষকে জাহান্নামে মুখ থুবড়ে ফেলে দেবে এই জিহ্বার পাপের ফল! (সুনানে তিরমিজি)

এ হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় জিহ্বা বা কথার পাপ কত গুরুতর এবং এর পরিণতি কত ভয়াবহ! অথচ আমরা অসাবধানতায় অপ্রয়োজনে এসব গুরুতর গুনাহে লিপ্ত হই যা হতে পারে আমাদের জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, বান্দা এমন কথা বলে, যেটাকে সে খুব তুচ্ছ মনে করে, কিন্তু সেই কথাটির জন্য সে জাহান্নামের এমন গভীরে নিক্ষিপ্ত হবে যার ব্যবধান পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যস্থিত ব্যবধানের চেয়েও বেশি। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

অনেক মানুষ আছেন যারা দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করেন, নামাজ পড়েন, সদকা করেন, অন্যান্য নেক আমল করেন, কিন্তু মুখের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারেন না; গিবত করেন, অন্যের ব্যাপারে অপবাদ ছড়ান, অন্যকে অপমান করে কথা বলেন। এমন মানুষদের মহানবী (সা.) নিঃস্ব ও সবচেয়ে অসহায় মানুষ হিবেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ আখেরাতে অনেক নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হওয়ার পরও এসব জুলুমের কারণে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়বে।

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন দুনিয়া থেকে নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু পাশাপাশি সেসব লোকেদেরও নিয়ে যাবে যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারও সম্পদ ভোগ করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে প্রহার করেছে; এ ধরনের লোকদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে হবে আর তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ মুসলিম)

তাই মুখের এসব গুনাহসহ অন্যের ওপর যে কোনো জুলুমের ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হবে। যেসব গুনাহ আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কিত তা আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন; তিনি রাহমানুর রাহিম। কিন্তু তিনি যেহেতু ন্যায়বিচারক, বান্দার হক তিনি ক্ষমা করবেন না। বান্দার হকের ক্ষমা বান্দার কাছেই পেতে হবে। দুনিয়াতে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা না করালে কেয়ামতের দিন নিজের নেক কাজ তাকে দিয়ে দিতে হবে, তার পাপের বোঝা বহন করতে হবে; যে দিন একটা নেক কাজের মূল্য হবে সারা দুনিয়া এবং এর সব সম্পদের চেয়ে বেশি।

ওএফএফ

Read Entire Article