যে কারণে উন্নত চিকিৎসায় বিকল্প ভাবা হচ্ছে চীনের হাসপাতাল

1 day ago 9

জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বাংলাদেশের রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে যান। চিকিৎসা খরচ বিবেচনায় থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের তুলনায় প্রতিবেশী দেশ ভারত সাশ্রয়ী। ফলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের সিংহভাগই ভারতের কলকাতা, দিল্লি ও চেন্নাইয়ে যান।

জটিল রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশের রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য মেডিকেল ভিসায় যেতেন। এছাড়া ভিজিট ভিসায় ভ্রমণে গিয়েও অনেকে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে আসতেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফলে ভারতের ভিসা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ভিজিট ভিসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল ভিসা সীমিত পরিসরে দেওয়া হচ্ছে।
ফলে নিরুপায় হয়ে অনেকেই থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ছুটছেন। ভারতের তুলনায় এ দুটি দেশে চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় রোগীদের স্বজনরা বিপাকে পড়ছেন।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনায় জটিল রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশি রোগীদের অপেক্ষাকৃত কম খরচে বিদেশের হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার চীনের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় চীনকে বাংলাদেশে একটি উন্নত মানের বিশেষত হাসপাতাল নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, চীন এরই মধ্যে কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ করেছে। তাছাড়া সম্প্রতি চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরকালে চীন সরকার বাংলাদেশে একটি উন্নতমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম বলেছেন, কুনমিং কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি রোগীদের জন্য হাসপাতালের নির্দিষ্ট তলা বরাদ্দ করেছে।

চিকিৎসার খরচও বেশ যুক্তিসঙ্গত। একজন বাংলাদেশি রোগী চীনা নাগরিকদের সমান খরচেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন, বলেন রাষ্ট্রদূত ইসলাম।

গত ৩০ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার চীনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানান, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এর ফলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ সহজে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

কুনমিং ভ্রমণ সহজ করতে ঢাকা ও কুনমিং রুটে বিমান টিকিটের দাম কমানোর উদ্যোগও নিয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশিদের জন্য আরও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা উন্মুক্ত করবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী পরিচালক আশিক চৌধুরী বলেন, জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা বাংলাদেশ থেকে প্রধাণত ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যান। এ দেশগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে বিকল্প হিসেবে চীনকে ভাবা হচ্ছে।

বাংলাদেশের রোগীরা চীনের হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শুরু করলে প্রতিযোগিতার কারণে অন্য তিনটি দেশের খরচ কমবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলে টাকা চলে যায়। এ কারণে চীনকে বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি কিছুদিন তাদের চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানরা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারবেন। এরপর একইভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণসহ প্রশিক্ষিত জনবল দ্বারা রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছে। মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও হেলথ কেয়ার এই বিনিয়োগ আলোচনায় থাকবে বলে তিনি জানান।

এমইউ/এমএইচআর/এমএস

Read Entire Article