বাংলাদেশের ক্রিকেটে দলীয়ভাবে হয়তো অনেক বড় কোনো সাফল্য নেই। তবে এ দেশের ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত সাফল্য বা রেকর্ড আছে অনেক। যার অধিকাংশই এসেছে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে।
ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে একইসঙ্গে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খেতাব জয় করা বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে দীর্ঘদিন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খেতাব ধরে রেখেছিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে ৬০০ প্লাস রান এবং ১০টির বেশি উইকেট নিয়ে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় স্থায়ী আসন গেঁড়ে নিতে পেরেছেন সাকিব।
টেস্ট টেস্ট যেহেতু ক্রিকেটের কুলীন শ্রেণির খেলা, সে কারণে এখানে যে কোনো রেকর্ডই সর্বোচ্চ সমাদৃত। আর এই জায়গায় সাকিব আল হাসান এমন একটি রেকর্ডে নিজের নাম যুক্ত করে নিতে পেরেছেন যা বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল। সাকিব ছাড়া শুধুমাত্র আর দু’জন ক্রিকেটার এই কৃতিত্বটি দেখাতে পেরেছেন।
এক টেস্টে সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি ১০টি উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব ২০১৪ সালের আগে ছিল মাত্র দু’জন ক্রিকেটারের। দু’জনই কিংবদন্তী। ইংল্যান্ডের স্যর ইয়ান বোথাম এবং পাকিস্তানের ইমরান খান। একই টেস্টে ব্যাট হাতে যেভাবে জ্বলে উঠেছিলেন, একইভাবে বল হাতেও। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১০টি উইকেট শিকার করা চাট্টিখানি কথা নয়।
২০১৪ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গে নিলেন ১০টি উইকেট। ইয়ান বোথাম এবং ইমরান খানদের বিরল তালিকায় তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে নাম লিখলেন বাংলাদেমের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
সাকিব আল হাসান : ২০১৪
২০১৪ সালে খুলনায় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪৩৩ রান করে বাংলাদেশ। তামিম করেন ১০৯ রান ও সাকিব করেন ১৩৭ রান।
জবাব দিতে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি করে জিম্বাবুয়ের হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও রেগিস চাকাভাও। তবে ৪১ ওভার বল করে ৮০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ৩৬৮ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ২৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। যদিও সাকিব এই ইনিংসে করেন মাত্র ৬ রান।
৩১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাকিব আল হাসানের ৪৪ বলে ৫ উইকেটে ভর করে জিম্বাবুয়েকে ১৫১ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। টেস্ট জয় পায় ১৬১ রানে।
ইয়ান বোথাম: ১৯৮০
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে সেঞ্চুরি এবং ১০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েন ইংলিশ অলআউন্ডার ইয়ান বোথাম। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ২২.৫ ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন বোথাম। ২৪২ রানে অলআউট হয় ভারত।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বোথামের ১১৪ রানের ওপর ভর করে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করে ২৯৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৪৯ রানে অলআউট হয় ভারত। বোথাম একাই ৪৮ রান দিয়ে নেন ৭ উইকেট। দুই ইনিংসে ১৩ উইকেট। ৯৬ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। কোনো উইকেট না হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা। বোথামকে ব্যাট করতে নামতে হয়নি।
ইমরান খান : ১৯৮৩
ইমরান খানের কীর্তিটাও ছিল ভারতের বিপক্ষে। ফয়সালাবাদে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত সংগ্রহ করে ৩৭২ রান। ইমরান খান ৯৮ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে চারজন ব্যাটার সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের।
জাভেদ মিয়াঁদাদ (১২৬), জহির আব্বাস (১৬৮), সেলিম মালিক (১০৭) ও ইমরান খান (১১৭)। এই চার সেঞ্চুরির ওপর ভর করে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৬৫২ রান। কপিল দেব নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। ইমরান খান ৮২ রানে নেন ৫ উইকেট।
দুই ইনিংসে ১১ উইকেট নেন ইমরান খান। সে সঙ্গে সেঞ্চুরিও। ১০ রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। কোনো উইকেট না হারিয়েই জিতে যায় তারা। ইমরান খানের আর ব্যাট করতে নামতে হয়নি।
উল্লেখ্যঃ ক্রিকেট ইতিহাসে এক টেস্টে ১০০ রানও ১০ উইকেট নেয়ার প্রথম কীর্তি গড়েছিলেন অ্যালান ডেভিডসন। অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার ব্রিসবেনে ১২৪ রান করেছিলেন এবং ১১ উইকেট নেন। তবে, তার এই ১২৪ রান এসেছিল দুই ইনিংস মিলে (৪৪+৮০)। এ কারণে ইমরান, বোথাম ও সাকিব আল হাসানদের সঙ্গে তার নাম উচ্চারণ হয় না।
আইএইচএস/এএসএম