যে বিশ্বাস, কথা ও কাজের কারণে ইমান নষ্ট হয়ে যায়

মুফতি সৈয়দ হামদুল্লাহ লাবীব ইসলামে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী বলা হয়, যে ব্যক্তি স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায়, বাধ্য না হয়ে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ গ্রহণ করে নেয়। যেমন খ্রীষ্টবাদ, ইহুদীবাদ কিংবা অন্য কোন মতবাদ; যেমন কেউ সাম্যবাদকে আদর্শরূপে গ্রহণ করে নিল। অথবা কেউ অস্বীকার করল দ্বীনের কোনো অবশ্যকীয় বিষয়। যেমন নামাজ ও রোজা আবশ্যক হওয়াকে অস্বীকার করল। অথবা ইসলামি আবশ্যকীয় কর্মপন্থা বিরোধী কোনো কাজ করল। কিংবা এমন কোনো কথা বলল, কুফর ছাড়া যার দ্বিতীয় কোনো ব্যাখ্যা নেই। কোনো মুসলমান মুরতাদ হলে বা ইসলাম ত্যাগ করলে তার সব আমল নষ্ট হয়ে যায় এবং তার ঠিকানা হয় চিরজাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ২১৭) মুরতাদ কয়েক ধরনের হতে পারে। নিচে এর প্রকারগুলো উদাহরণসহ তুলে ধরলাম। বিশ্বাসের কারণে মুরতাদ হওয়ার উদাহরণ ১. বিজ্ঞ আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত, মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে,

যে বিশ্বাস, কথা ও কাজের কারণে ইমান নষ্ট হয়ে যায়

মুফতি সৈয়দ হামদুল্লাহ লাবীব

ইসলামে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী বলা হয়, যে ব্যক্তি স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায়, বাধ্য না হয়ে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ গ্রহণ করে নেয়। যেমন খ্রীষ্টবাদ, ইহুদীবাদ কিংবা অন্য কোন মতবাদ; যেমন কেউ সাম্যবাদকে আদর্শরূপে গ্রহণ করে নিল। অথবা কেউ অস্বীকার করল দ্বীনের কোনো অবশ্যকীয় বিষয়। যেমন নামাজ ও রোজা আবশ্যক হওয়াকে অস্বীকার করল। অথবা ইসলামি আবশ্যকীয় কর্মপন্থা বিরোধী কোনো কাজ করল। কিংবা এমন কোনো কথা বলল, কুফর ছাড়া যার দ্বিতীয় কোনো ব্যাখ্যা নেই।

কোনো মুসলমান মুরতাদ হলে বা ইসলাম ত্যাগ করলে তার সব আমল নষ্ট হয়ে যায় এবং তার ঠিকানা হয় চিরজাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ২১৭)

মুরতাদ কয়েক ধরনের হতে পারে। নিচে এর প্রকারগুলো উদাহরণসহ তুলে ধরলাম।

বিশ্বাসের কারণে মুরতাদ হওয়ার উদাহরণ

১. বিজ্ঞ আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত, মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে, কিংবা তাকে অস্বীকার করবে, অথবা তার কোনো সিফত ও গুণ অস্বীকার করবে, যা তার মত মানুষের অজানা থাকার কথা নয়, বা তার জন্য এমন কিছু সাব্যস্ত করে যা তিনি নিজেই অস্বীকার করেছেন, যেমন তার সন্তান থাকা; অথবা ফেরেশতা, কিতাব, রাসূল, কেয়ামত দিবস, তাকদিরের ভালমন্দ, কিংবা দ্বীনের জরুরি কোনো বিষয় অস্বীকার করে, তবে সে মুরতাদ ও কাফের হয়ে যাবে।

২. যে ব্যক্তি পুরো কুরআন অস্বীকার করবে, অথবা কোরআনের কোনো একটি অংশ অস্বীকার করবে, যদিও তা এক আয়াত পরিমাণ হয়, সে মুরতাদ হয়ে যাবে। তেমনি যে ব্যক্তি কোরআনে কোনো অসঙ্গতি এবং বৈপরীত্য থাকায় বিশ্বাস করবে, কিংবা তার অলৌকিকতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে, অথবা তার মতো রচনা তৈরি করতে পারার দাবি করবে, কোরআনের সম্মান বিনষ্ট করবে, তাতে কমবেশ করবে, সেও মুরতাদ হয়ে যাবে।

৩. রাসুল (সা.) যে দ্বীন নিয়ে আগমন করেছেন, যে ব্যক্তি তার কোনো অংশ অস্বীকার করবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। তা ছাড়া যে ব্যক্তি সর্বসম্মতভাবে হারাম এমন কোনো বিষয়কে অস্বীকার করবে যেমন ব্যাভিচার ও মদ হারাম হওয়া, সেও মুরতাদ হয়ে যাবে।

কথার কারণে মুরতাদ হওয়ার উদাহরণ

১. যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, কোরআন, রাসুল, কিংবা কোনো নবীকে গালি দেয়; কৌতুক করে, অন্তর থেকে, অথবা বিদ্রূপ করে, সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যদি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসুলের সাথে কি তোমরা বিদ্রূপ করেছিলে? তোমরা ওজর পেশ কর না, তোমরা তোমাদের ইমানের পর অবশ্যই কুফরি করেছ। (সুরা তাওবা: ৬৫, ৬৬)

২. যে ব্যক্তি ইসলামের ওপর আক্রমণ করবে এবং আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে কটূক্তি করবে, কিংবা নাস্তিক্যবাদ বা কুফরি কোনো মতবাদের দিকে আহ্বান করবে, সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যদি তারা তাদের অঙ্গীকারের পর তাদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে কটূক্তি করে, তাহলে তোমরা কুফরের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, নিশ্চয় তাদের কোনো কসম নেই, যেন তারা বিরত হয়। (সুরা তাওবা: ১২)

কর্মের ফলে মুরতাদ হওয়ার উদাহরণ

১. আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন, কোনো মুসলমান যদি কোরআন কিংবা তার কোনো অংশ ছুঁড়ে ফেলে, ময়লা যুক্ত করে, নবীজির (সা.) হাদিসের কিতাবগুলোর সঙ্গে এ ধরণের আচরণ করে, তেমনই কেউ যদি কোরআনকে অবজ্ঞা করে, তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যদি তুমি তাদের প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কি তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? (সুরা তাওবা: ৬৫)

২. আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত, মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো মূর্তি, চাঁদ কিংবা সূর্যকে সিজদা করবে, অথবা এমন সুস্পষ্ট কোনো কাজ করবে যা দ্বীনের প্রতি তার অবজ্ঞা প্রকাশ করে, সে মুরতাদ হয়ে যাবে।

৩. যে ব্যক্তি মুসলমানদের থেকে পালিয়ে দারুল হরবে (কাফেরদের ওই সমস্ত দেশ, যেসব দেশের কাফেররা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত) চলে যাবে ইচ্ছাকৃতভাবে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে, সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হেদায়াত দেন না। (সুরা মায়েদা: ৫১)

এ ছাড়া নবীজি (সা.) থেকেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। তিনি এমন ব্যক্তি থেকে দায়মুক্তি ঘোষণা করেছেন।

৪. যে ব্যক্তি ইসলামি শরিয়তের বিরুদ্ধাচারণ করবে, তা পরিবর্তন করবে মানব রচিত আইন দিয়ে, শরঈ বিধি-বিধানকে বিলুপ্ত করার জন্য, সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন. আর যারা আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফের। (সুরা মায়েদা: ৪৪)

লেখক: খতিব, জামিয়া মাহমুদিয়া দারুস সালাম জামে মসজিদ, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ

ওএফএফ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow