এক ছাদের নিচে দুই নারী-একজন জন্ম দিয়েছেন, আরেকজন ভালোবেসে জায়গা করে নিয়েছেন সেই ছেলের জীবনে। একজন অভিজ্ঞ জীবনের স্রোতে গড়া, অন্যজন নতুন আশার আলো নিয়ে আসা তরুণী। এদের মাঝখানে যে সম্পর্ক, সেটি কখনো মিষ্টি, কখনো টক আবার কখনো নিঃশব্দ বোঝাপড়ার গল্প। এই বন্ধন রক্তের নয়, কিন্তু অনুভূতির।
ভালোবাসা, ধৈর্য আর সম্মানের এক সূক্ষ্ম সেতুবন্ধন যেখানে দু’জন নারী একে অপরকে বুঝে নেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। আজ শাশুড়ি দিবসে তাই মনে করিয়ে দেওয়া দরকার সম্পর্কটা টিকে থাকে না রাগে বা প্রতিযোগিতায়, বরং টিকে থাকে ছোট ছোট যত্ন আর বোঝাপড়ায়।
শাশুড়ি দিবস এমন এক দিন, যা শুনলেই অনেকের মুখে হাসি ফোটে, কারও মনে আবার পুরনো স্মৃতি জেগে ওঠে। কেউ ভাবেন ‘আহা, আমার দ্বিতীয় মা!’, কেউ বলেন, ‘ওই নামটা শুনলেই ভয় লাগে!’ কিন্তু সত্যি কথা হলো, শাশুড়ি নামটার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অনন্য আবেগ, এক অদ্ভুত সম্পর্কের রসায়ন, যা কখনও বন্ধুত্ব, কখনও প্রতিযোগিতা, আবার কখনও নিঃশর্ত ভালোবাসার গল্প বলে।

শাশুড়ি দিবসের সূচনা
অনেকেই জানেন না, বিশেষ এই দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০২ সালে অ্যামি উইলসন নামের এক নারী তার শাশুড়ির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে এ দিবস উদযাপনের সূচনা করেন। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং অক্টোবরের শেষ রোববার (কিছু দেশে অক্টোবরের চতুর্থ রোববার) ‘শাশুড়ি দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে যদিও এ দিবস এখনো তেমন প্রচলিত নয়, তবুও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে দিনটি ধীরে ধীরে আমাদের ঘরেও জায়গা করে নিচ্ছে।
বউ-শাশুড়ি সম্পর্কটা আসলে কেমন?
শাশুড়ি-বউ সম্পর্ক নিয়ে হাস্যরস, গল্প, সিনেমা বা টেলিফিল্ম-সব জায়গায়ই বিষয়টি নিয়ে নানা রকম আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবে এই সম্পর্কটা অনেক গভীর।
বউ আসে নতুন একটা পরিবারে, আর শাশুড়ি তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ অর্থাৎ ছেলেকে নতুন কাউকে ভাগ করে দেন। এখানে একটু সময়, বোঝাপড়া আর ভালোবাসা থাকলেই সম্পর্কটা হয়ে ওঠে মধুর।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্ক হলো পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল বন্ধনগুলোর একটি। বোঝাপড়া থাকলে এই সম্পর্কই হতে পারে মেয়ের দ্বিতীয় আশ্রয়।’
আরও পড়ুন:
চুমুতেই কমবে ওজন, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সত্যিকারের বন্ধু চিনবেন যেভাবে
সঙ্গী আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে না তো!
আগে হয়তো ‘শাশুড়ি মানেই কঠোর মানুষ’-এমন ধারণা প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখনকার প্রজন্মে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের শাশুড়িরা এখন মেয়েকে শুধু ‘বউ’ নয়, বরং ‘মেয়ের মতো’ ভাবেন। তারা একসঙ্গে বাজারে যান, সিনেমা দেখেন, এমনকি ফেসবুকে একে অপরের পোস্টে রিঅ্যাক্ট দেন।
আমরা প্রায়ই বউদের দিকের গল্প শুনি, কিন্তু শাশুড়িদের গল্প কে শোনে? বছরের পর বছর সংসারের দায়িত্ব, সন্তান পালন, পরিবার সামলানোর পর একসময় তারা চান একটু যত্ন, একটু সম্মান আর একটু ভালোবাসা। এই এক দিনের উদযাপন তাদের সেই প্রাপ্য ভালোবাসার স্বীকৃতি হতে পারে।
কীভাবে উদযাপন করবেন শাশুড়ি দিবস?
এই দিনটা উদযাপনের জন্য আলাদা আয়োজনের দরকার নেই। বরং ছোট ছোট যত্নের মাধ্যমেই তৈরি হতে পারে বড় আনন্দ। যেমন- সকালে একটা ফুল দিয়ে ‘শুভ শাশুড়ি দিবস’ বলা, তার পছন্দের খাবার রান্না করা, পুরনো অ্যালবাম খুলে একসঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন অথবা শুধু একটু সময় দেওয়া-সেটাই সবচেয়ে বড় উপহার।
শাশুড়ি শুধু সম্পর্কের নাম নয়, এটি দুই প্রজন্মকে এক সুতায় বেঁধে রাখার বন্ধন। কখনও তিনি শিক্ষক, কখনও মা, কখনও আবার নিঃশব্দ সমর্থন হয়ে পাশে থাকেন। আজকের দিনটি হোক সেই ভালোবাসাকে নতুন করে জানানোর দিন।
জেএস/জেআইএম

 3 hours ago
                        4
                        3 hours ago
                        4
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·