বাঙালির রান্নাঘরে বেগুনের উপস্থিতি যেন প্রতিদিনের ঘটনা। ভর্তা, ভাজি, ডাল কিংবা মাছের ঝোল—সবখানেই বেগুনের কদর কম নয়। অনেকে তো বলেন, গরম ভাত আর একটু ঝাল-মসলাদার বেগুন ভর্তার সঙ্গে তুলনা চলে না। ভিটামিন, ফাইবার আর নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এই সবজি সাধারণভাবে স্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। কিন্তু তাই বলে কি সবাই নির্বিঘ্নে খেতে পারবেন? একেবারেই তা নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট সমস্যায় ভোগা মানুষের জন্য বেগুন বরং হয়ে উঠতে পারে ক্ষতির কারণ। চলুন তাহলে জেনে নিই, কোন ৫ ব্যক্তির জন্য বেগুন খাওয়া বিপজ্জনক
১. কিডনিতে পাথর বা কিডনির সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিরা
অক্সালেট হলো প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারে উপস্থিত যৌগ। বেগুনে এটি মাঝারি পরিমাণে থাকে। আমেরিকান জার্নাল অফ ফিজিওলজি-রেনাল ফিজিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, বেগুন কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এই অক্সালেট পাথর গঠনে অবদান রেখে সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ এড়াতে উচ্চ-অক্সালেটযুক্ত খাবার গ্রহণ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা থাকলে
বেগুনের খোসায় নাসুনিন নামক একটি উদ্ভিদ যৌগ থাকে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আয়রনের সঙ্গে আবদ্ধ হতে পারে। যদিও এই বৈশিষ্ট্য অতিরিক্ত আয়রনযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রতিরক্ষামূলক হতে পারে, তবে এটি ইতোমমধ্যেই আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতার সঙ্গে লড়াই করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আয়রনের প্রাপ্যতা হ্রাস করতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে বেগুন খাওয়ার ফলে শরীরের জন্য পর্যাপ্ত আয়রন শোষণ এবং ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
৩. যারা নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন
NIH-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, বেগুনে স্বাভাবিকভাবেই অল্প পরিমাণে টাইরামাইন থাকে। এটি একটি যৌগ যা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, বিশেষ করে বিষণ্ণতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত মনোঅ্যামিন অক্সিডেস ইনহিবিটর (MAOI)। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাওয়া হলে, টাইরামাইন এই ওষুধ গ্রহণকারীদের রক্তচাপকে বিপজ্জনক মাত্রায় বাড়িয়ে দিতে পারে। এই কারণে, MAOI-এর জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিদের বেগুন সহ টাইরামাইনযুক্ত খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
৪. হজমের সমস্যা থাকলে
বেগুনে প্রচুর খাদ্যতালিকাগত ফাইবার থাকে, যা সাধারণত সুস্থ হজম এবং অন্ত্রের কার্যকারিতায় সহায়তা করে। তবে নির্দিষ্ট গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফাইবার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। যাদের ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, প্রদাহজনক পেটের রোগ অথবা সংবেদনশীল পাচনতন্ত্র আছে তাদের বেগুন বেশি পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপা, অস্বস্তি বা আলগা মল তৈরি হয়।
৫. যারা নাইটশেড বা অ্যালার্জির প্রতি সংবেদনশীল
বেগুন নাইটশেড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে টমেটো, আলু এবং মরিচও রয়েছে। এই গ্রুপের সংবেদনশীলতা কখনো কখনো অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে ত্বকের জ্বালা, মাথাব্যথা বা হজমের ব্যাঘাত ইত্যাদি। আরও গুরুতর ক্ষেত্রে এটি অ্যালার্জির ফ্লেয়ার-আপ বা প্রদাহের কারণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে বেগুন খাওয়া বাদ দিতে হবে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস