যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন হজরত আবু বকর (রা.)

3 hours ago 5

আবু বকর (রা.) ছিলেন আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শ্রেষ্ঠ সাহাবি। ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি একজন। বলা হয় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

নবুয়্যতপ্রাপ্তির আগ থেকেই নবিজির (সা.) সাথে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। তাই নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুয়ত ও রিসালাত লাভ করার পর দ্রুতই আবু বকরকে (রা.) এ সংবাদ দেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আবু বকর (রা.) কোনো দ্বিধা বা সংশয় ছাড়াই নবিজির (সা.) কথাকে সত্য মেনে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকর (রা.) যেহেতু নবিজির (সা.) চরিত্র সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতেন, তাই নবিজির (সা.) নবুয়্যত লাভের সংবাদ যে সত্য, তিনি যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে পারেননা এ ব্যাপারে তার মনে কোনো সন্দেহ ছিল না।

ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি যখনই কাউকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছি, সে কিছুটা সময় নিয়ে ভেবেছে এবং দ্বিধা প্রকাশ করেছে, শুধু আবু বকর ছাড়া। যখন আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দেই, সে একটুও বিলম্ব বা দ্বিধা করেনি।

আবু বকর (রা.) নিজে মুসলমান হয়েই থেমে থাকেননি, বরং নিজের উদ্যোগে ইসলামের প্রচারও শুরু করেন। আবু বকর (রা.) ছিলেন মক্কার সর্বজনপ্রিয় ও প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। আভিজাত্য, ভদ্রতা ও সুচরিত্রের জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তার দাওয়াতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ওসমান ইবনে আফফান, আবদুর রহমান ইবনে আওফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, জুবাইর ইবনে আওয়াম এবং তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

ইসলামের জন্য আবু বকরের (রা.) ত্যাগ-তিতিক্ষা, আল্লাহর ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার অগ্রগামিতা তাকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত করে। মুসলমানদের মধ্যে নবিজির (সা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবিজি (সা.) তাকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তার অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৪)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, আমার পরে আপনারা আমার সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করুন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৩)

উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতেও প্রবেশ করবেন আবু বকর (রা.)। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, একদিন জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে আমাকে জান্নাতের ওই দরজাটি দেখান যে দরজা দিয়ে আমার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আবু বকর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল! আমার ইচ্ছা হচ্ছে, যদি এ সময় আমি আপনার সাথে থাকতাম, তা হলে জান্নাতের ওই দরজা দেখতে পেতাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আবু বকর! আমার উম্মতের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৫৮৩)

ইসলামের আবির্ভাবের আগে যেমন তিনি নবিজির (সাা.) সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন, ইসলাম গ্রহণের পর নবিজির (সা.) ওফাত পর্যন্ত তিনিই ছিলেন নবিজির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ও প্রধান সহযোগী। নবিজির (সা.) প্রতি তার অনুরাগ ও ভালোবাসা ছিল সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। নবিজি (সা.) কখনও নিজের মৃত্যু বা বিদায়ের কথা বললে তিনি কেঁদে ফেলতেন।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে যা আছে-এ দুয়ের মধ্যে একটি গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে, তা গ্রহণ করেছেন।

এ কথা শুনে আবু বকর (রা.) কেঁদে ফেললেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই বৃদ্ধ কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তার এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে যা আছে-এ দুয়ের একটা গ্রহণ করার এখতিয়ার দিলে তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে তা গ্রহণ করেছেন। এখানে কাঁদার মতো কী আছে! আমি বুঝতে পারিনি আল্লাহর রাসুলই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন সেই বান্দা। এটা ছিল তার বিদায়ের ইঙ্গিত। আবু বকর (রা.) ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি।

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকরকে কাঁদতে দেখে বললেন, আবু বকর, তুমি কাঁদবে না। নিজের সাহচর্য ও সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি যিনি সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ করেছেন, তিনি আবু বকর। (সহিহ বুখারি: ৪৬৬)

ওফাতের আগে নবিজির (সা.) যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাকে নিজের জায়গায় নামাজের ইমামতির দায়িত্ব দেন। নবিজির (সা.) ওফাতের পর সাহাবিদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তিনি মুসলমানদের খলিফা নির্বাচিত হন।

ওএফএফ/এএসএম

Read Entire Article