যেভাবে একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন নবি ইবরাহিম (আ.)

3 months ago 27

ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নবি এবং তার অত্যন্ত নেক ও প্রিয় একজন বান্দা। তার ইমানের দৃঢ়তা, আল্লাহমুখিতা, একনিষ্ঠতা ছিল অতুলনীয়। তাকে আবুল আম্বিয়া বা নবিদের পিতা বলা হয়। আল্লাহ তাআলা তার বংশের বহু সংখ্যাক ব্যক্তিকে নবুয়্যত দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর শেষ নবি হজরত মুহাম্মাদও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) তার বংশধর।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা নবি ইবরাহিমের (আ.) আনুগত্য ও একনিষ্ঠতার প্রশংসা করেছেন এবং নবিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন তার মিল্লাত বা মতাদর্শ অনুসরণ করতে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় ইবরাহিম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সঠিক পথে। আমি তাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করেছিলাম, আর আখেরাতেও তিনি অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তোমার প্রতি ওহি করছি যে, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহিমের মতাদর্শ অনুসরণ কর। (সুরা নাহল: ২০-২৪)

কোরআনের বহু আয়াতে তার নাম এসেছে। কোরআনে একটি সুরাও রয়েছে তার নামে। কাবা নির্মাণ, ছেলেকে কোরবানি করতে নিয়ে যাওয়া, নমরুদের সাথে বিতর্ক, তার জন্য আগুন আরামদায়ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি তার জীবনের বহু ঘটনা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা মূর্তি পূজার অসারতা বোঝাতে নবি ইবরাহিমের (আ.) প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। যখন তিনি তার বাবা ও জাতির অন্যান্যদের মূর্তি পূজার অসারতা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, তারা কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছিল না, তখন তিনি তাদের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।

তার জাতি একটি বিশেষ দিনে দলবেধে লোকালয়ের বাইরে মেলায় যেত। তিনি মূর্তি ভাঙার জন্য ওই দিনটি নির্বাচন করেন। সেদিন সকালে তার বন্ধুবান্ধবরা যখন তাকে ডাকে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য, তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ’। যদিও তিনি মেলায় যাওয়ার মতো অসুস্থতা তার ছিল না। তিনি তার মানসিক বা শারীরিক ‍মৃদু অসুস্থতার কথা বলেছিলেন। তারা তাকে রেখে মেলায় চলে গেলে তিনি তাদের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলেন।

কোরআনে সুরা আম্বিয়ায় ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, আমি ইতিপূর্বে ইবরাহিমকে তার সৎপন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাতও ছিলাম। যখন তিনি তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বললেন, এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ। তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি। তিনি বললেন, তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহিতে আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও। তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুক করছ?

তিনি বললেন, না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা। আল্লাহর কসম, যখন তোমরা চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা নেবো। তারপর তিনি সেগুলোকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দিলেন ওদের প্রধানটি ছাড়া যাতে তারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে।

তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের সাথে এ রকম ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম। কতক লোক বলল, আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তার নাম ইবরাহিম। তারা বলল, তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখে। তারা বলল, হে ইবরাহিম তুমিই কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না এদের এই প্রধানই (বড় মূর্তিটি) তো এ কাজ করেছে। তাই তাকেই জিজ্ঞেস কর, যদি সে কথা বলতে পারে।

তারা মনে মনে চিন্তা করল এবং বলল, লোক সকল; তোমরাই বে ইনসাফ। তারপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না ? ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরই ইবাদত কর, ওদের জন্যে। তোমরা কি বোঝ না? তারা বলল, একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।

আমি বললাম, হে অগুন, তুমি ইবরাহিমের ওপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা ইবরাহিমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, আমি তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম। আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি। (সুরা আম্বিয়া: ৫২-৭১)

সুরা সাফফাতেও ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন তিনি (ইবরাহিম আ.) তার বাবা ও তার কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কিসের ইবাদত কর? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যগুলোকে চাও? তাহলে সকল সৃষ্টির রব সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী? তিনি একবার তারকারাজির দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘আমি তো অসুস্থ’।

তারা তার কাছ থেকে চলে গেলে চুপে চুপে তিনি তাদের দেবতাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, তোমরা কি খাবে না? তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা কথা বলছ না? তারপর তিনি তাদের ওপর সজোরে আঘাত হানলেন।

লোকেরা (ফিরে এসে) তার দিকে ছুটে এলো। তিনি বললেন, যে মূর্তি তোমরা পাথর খোদাই করে নিজেরা বানাও, সেগুলোরই আবার ইবাদত কর? আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে আর তোমরা যা তৈরি কর সেগুলোকেও। তারা বলল, তার জন্য একটা অগ্নিকুন্ড তৈরি কর, অতঃপর তাকে আগুনে নিক্ষেপ কর।

তারা তার ব্যাপারে একটা ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সম্পূর্ণ পরাভূত করে দিলাম। তিনি বললেন, আমি আমার রবের দিকে চললাম, তিনি আমাকে অবশ্যই সঠিক পথ দেখাবেন। (সুরা সাফফাত: ৮৫-৯৯)

এ ঘটনা ঘটেছিল ইরাকের ব্যাবিলন শহরে। এ ঘটনার পর তিনি সেখান থেকে হিজরত করে শামে অর্থাৎ বর্তমান সিরিয়া-ফিলিস্তিন অঞ্চলে চলে যান। (ফাতহুল কাদির)

ওএফএফ/এএসএম

Read Entire Article