যেভাবে বদলে গেলেন আমর ইবনুল আস (রা.)

13 hours ago 6

আমর ইবনুল আস মক্কার কোরাইশ বংশের বনু সাহম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি ছিলেন মক্কার তরুণ সর্দারদের একজন। তাকে অত্যন্ত তীক্ষ্ণধী ও কূটকৌশলী মানুষ মনে করা হতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর কোরাইশের বেশিরভাগ নেতার মতো তিনিও ইসলামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন।

হাবাশার বাদশাহ নাজাশির সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। নবিজির (সা.) পরামর্শে কয়েকজন সাহাবি হাবাশায় হিজরত করলে তিনি কোরায়শের পক্ষ থেকে হাবাশার বাদশাহ নাজাশির কাছে গিয়েছিলেন, নাজাশি যেন তার দেশে মুসলমানদের আশ্রয় না দেন। কিন্তু নাজাশি কোরায়শের অনুরোধ উপেক্ষা করে মুসলমানদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ব্যর্থ হয়ে মক্কায় ফেরেন।

নবিজি (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর আমর ইবনুল আস (রা.) মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরায়শের প্রায় সবগুলো যুদ্ধেই অংশ নেন। তিনি বদরে কুরায়শের পক্ষে যুদ্ধ করেন। ওই যুদ্ধে মক্কার মুশরিকরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। আবু জাহল, উতবা, উমাইয়াসহ কোরায়শের শীর্ষস্থানীয় বেশিরভাগ সর্দার নিহত হয়। ওহুদের ‍যুদ্ধে তিনি ছিলেন মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম। ওহুদে মুসলমানদের কিছু ক্ষতি হলেও মুশরিকরা তেমন সফলতা পায়নি।

খন্দকের যুদ্ধেও তিনি ছিলেন মুশরিক বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ নেতা। এই যুদ্ধে মক্কার মুশরিকরা আরবের বিভিন্ন মুশরিক গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে একটি বিশাল বাহিনী তৈরি করেছিল। মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করে দেওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার দ্বীনকে রক্ষা করেন। সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও চেষ্টার পরও মুশরিকরা ব্যর্থ হয়।

খন্দকের যুদ্ধে ব্যর্থতার পর আমর ইবনুল আস (রা.) বুঝতে পারেন, নবিজি (সা.) বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। তাকে বাঁধা দেওয়ার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে। এরপরও তিনি ইসলাম গ্রহণের কথা ভাবেননি। বরং তিনি আরব ছেড়ে হাবাশায় তার বন্ধু নাজাশির কাছে চলে যান যেন মুসলমানরা মক্কা দখল করে ফেললেও তিনি নিরাপদ থাকতে পারেন।

কিন্তু হাবাশার বাদশাহ নাজাশি ততদিনে ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, নবিজির (সা.) কাছে মদিনায় না গেলেও মুসলমান হয়ে গেছেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ না করার জন্য আমর ইবনুল আসকে (রা.) ভর্ৎসনা করেন। নাজাশি বলেন, মুহাম্মাদের আনুগত্য কর। আল্লাহর কসম, তিনি সত্যপন্থী। তিনি তার বিরোধীদের ওপর বিজয়ী হবেন যেমন মুসা (আ.) ফেরাউন ও তার লোক লস্করদের ওপর বিজয়ী হয়েছিলেন।

সাবেক খৃষ্টান বাদশাহ নাজাশির মুখে এসব কথা শুনে আমর ইবনুল আস (রা.) ইসলাম গ্রহণের কথা ভাবতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে মদিনার দিকে যাত্রা করেন।

নিজের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা বর্ণনা করে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, এক সময় আমি এমন ছিলাম যে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোর কেউ ছিল না। আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাবনা ছিল, আমি যদি তাকে কবজায় পেয়ে হত্যা করতে পারতাম! সে অবস্থায় আমার মৃত্যু হলে নিশ্চিত আমাকে জাহান্নামে যেতে হতো।

এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানালাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বায়াত হতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ডান হাত বাড়িয়ে দিলে আমি আমার হাত টেনে নিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমর, কী ব্যাপার? আমি বললাম, আগে আমি শর্ত দিয়ে নিতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, কী শর্ত দেবে? আমি উত্তর দিলাম, আল্লাহ যেন আমার সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমর! তুমি কি জানো না ইসলাম পূর্ববর্তী সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরত আগের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হজও আগের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়।

এ পর্যায়ে আমার কাছে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চেয়ে বেশি প্রিয় কেউ ছিল না। আমার চোখে তার চেয়ে মহান কেউ ছিল না। অপরিসীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তার দেহ আকৃতি বর্ণনা করতে বলা হয়, তাহলে আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না। কারণ পূর্ণ দৃষ্টিতে আমি কখনো তার দিকে তাকাতে পারিনি। (সহিহ মুসলিম: ১২১)

ইসলাম গ্রহণের পর আমর ইবনুল আস (রা.) আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে মক্কা বিজয়সহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নবিজির (সা.) নির্দেশে যাতুস সালাসিল অভিযানে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তিনি। নবিজির (সা.) ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদার শাসনকালেও মুসলমানদের সেনাবাহিনীতে একজন সেনাপতি হিসেবে তিনি কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা.) শাসনকালে তিনি মিশর বিজয়ে নেতৃত্ব দেন এবং মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ওএফএফ/জেআইএম

Read Entire Article