আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটির ইতিহাস যুদ্ধ, কূটনীতি ও বৈশ্বিক শক্তির নাট্য মঞ্চ। এটি ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত বাহিনীর আফগানিস্তান দখলকালে এই ঘাঁটিই ছিল তাদের প্রধান বিমান ঘাঁটি। মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার সামরিক অভিযান এখান থেকেই পরিচালিত হয়।
ড. নজিবুল্লাহ সরকারের পতনের পর এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটে বাগরাম একাধিকবার বিভিন্ন যুদ্ধরত গোষ্ঠীর হাতে হাত বদল হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করার পর ঘাঁটিটি পুনরায় সক্রিয় করা হয়। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বে অন্যতম কৌশলগত ও শক্তিশালী সামরিক স্থাপনায় রূপ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে বাগরাম পরিণত হয় একপ্রকার সামরিক শহরে। যেখানে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রানওয়ে ছিল—যেগুলো থেকে যুদ্ধবিমান, বোমারু ও বিশাল পরিবহন বিমানের চলাচল হতো।
ঘাঁটির ভেতরে তৈরি হয় ব্যারাক, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, দোকান ও এমনকি জিম পর্যন্ত।
অনেক মার্কিন সেনার জন্য বাগরাম ছিল একটি দ্বিতীয় বাড়ি। যদিও কংক্রিট প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া সব সময় যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিতো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফজল মনাল্লাহ মমতাজ বলেন, বাগরাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি ছিল। সোভিয়েতদের সময়েও এটি কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং আমেরিকার জন্যও তাই।
গত দুই দশকে তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট—জর্জ ডব্লিউ. বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগরাম সফর করেন। জো বাইডেনও ২০১১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেন।
২০২১ সালের গ্রীষ্মে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার ঠিক আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করেই রাতের আঁধারে বাগরাম ত্যাগ করে। পরদিন সকালে হতবাক আফগান সেনা ও স্থানীয়রা একটি ফাঁকা ঘাঁটি দেখতে পান—যেটি দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক উপস্থিতির প্রতীক ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সায়েদ আবদুল্লাহ সাদেক বলেন, আফগানিস্তান নিজেই একটি কৌশলগত স্থান, আর বাগরাম ছিল সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিগুলোর একটি।
তবে বাগরাম কেবল সামরিক ঘাঁটি ছিল না। এর ভেতরে থাকা একটি কারাগার আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়।
সেখানে শত শত আফগান, যাদের আল-কায়েদা বা তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হতো, বন্দি রাখা হতো এবং কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হতো।
সামরিক বিশ্লেষক আহমদ খান আনদার বলেন, এই ঘাঁটির ভেতরেই তারা একটি কারাগার নির্মাণ করে, যেখানে আল-কায়েদা ও তালেবান সংশ্লিষ্টদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো।
বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা এটিকে আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো নামে আখ্যায়িত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার (২০ বারেরও বেশি) দাবি করেছেন যে, বাগরাম কখনোই ত্যাগ করা উচিত ছিল না।
প্রায় প্রতিবারই বাগরামের প্রসঙ্গে তিনি চীনের নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন, ঘাঁটিটি এখন চীনের হাতে চলে গেছে।
যদিও তালেবান এই দাবি অস্বীকার করেছে এবং এখন পর্যন্ত এর কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সূত্র: টোলো নিউজ
এমএসএম