মুসলমানদের জন্য পৃথিবীর যে কোনো জায়গাই মসজিদ বা সিজদার স্থান হতে পারে যদি অপবত্রিতা, অপরিচ্ছন্নতা, শিরকের সাদৃশ্য ইত্যাদি সমস্যা না থাকে। তাই মুসলমানরা মসজিদে যেমন তারা নামাজ আদায় করেন, ঘরে, অফিসে, খোলা মাঠে বা যানবাহনেও নামাজ আদায় করে থাকেন।
তবে হাদিসে কিছু জায়গাকে নামাজ আদায়ের স্থান হওয়ার অনুপযুক্ত গণ্য করা হয়েছে ওই জায়গাগুলোতে অপবিত্রতা, অপরিচ্ছন্নতা, শিরকের আশংকা ইত্যাদি সমস্যা থাকায়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সমগ্র জমিনই মসজিদ বা সেজদার স্থান। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯২)
এ হাদিসে কবরস্থান ও গোসলখানাকে নামাজ আদায়ের স্থান হওয়ার অনুপযুক্ত গণ্য করা হয়েছে শিরকের সাদৃশ্য বা অপবিত্রতার আশংকায়। এ ছাড়া আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবিজি (সা.) কবরস্থান ও গোসলখানাসহ মোট সাতটি স্থানে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাতটি স্থানে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন:
১. ময়লা ফেলার স্থান
২. কসাইখানা
৩. কবরস্থান
৪. চলাচলের রাস্তা
৫. গোসলখানা
৬. উটের আস্তাবল
৭. বায়তুল্লাহর ছাদ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৬)
উল্লিখিত জায়গাগুলোতে যে কারণে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে:
১. ময়লা ফেলার স্থান
ময়লা ফেলার জায়গা অপরিচ্ছন্ন হয়, অপবিত্রও হতে পারে। তাই বাহ্যত অপবিত্রতা দেখা না গেলেও ময়লা ফেলার জায়গায় নামাজ আদায় করা উচিত নয়।
২. কসাইখানা
কসাইখানা সাধারণত রক্ত ও অন্যান্য আবর্জনায় দূষিত হয়ে থাকে। তাই কসাইখানায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো কসাইখানায় পবিত্র ও পরিষ্কার জায়গা থাকে, তাহলে সেখানে নামাজ পড়া যেতে পারে।
৩. কবরস্থান
মুশরিক ও পথভ্রষ্টদের কবর পূজার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার আশংকা থাকা কবরস্থানে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন নবিজি (সা.)। তবে কবরস্থানে জানাজার নামাজ আদায় করা যায়। হাদিসে এসেছে, নবিজির (সা.) যুগে এক নারী মসজিদ ঝাড়ু দিতেন। তিনি মারা গেলে নবিজিকে (সা.) না জানিয়েই সাহাবিরা তার জানাজার নামাজ আদায় করে তাকে দাফন করেন। পরে নবিজি (সা.) তার কবরস্থানে গিয়ে তার জানাজার নামাজ আদায় করেন। (সহিহ বুখারি: ৪৬০)
৪. চলাচলের রাস্তায়
মানুষ চলাচল করে এমন রাস্তায় নামাজ আদায় করলে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তাই বিকল্প জায়গা থাকলে চলাচলের রাস্তায় নামাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৫. গোসলখানা
গোসলখানায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ গোসলখানা অপবিত্র ও অপরিচ্ছন্ন হওয়ার হওয়ার আশংকা আছে। একেবারে অপারগ না হলে গোসলখানায় নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. উটের আস্তাবল
উটের আস্তাবলও উটের মলমুত্র ত্যাগ করার কারণে অপবিত্র ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। তাই উটের আস্তাবলে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৭. কাবা ঘরের ছাদের ওপর
কাবাঘরের ছাদে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ নামাজে দাঁড়ালে যথাযথভাবে কাবার দিকে ফেরা বা কিবলামুখী হওয়া যায় না। তবে অনেক আলেমের মতে, কাবার ভেতরে যেমন নামাজ আদায় করা যায়, কাবার ছাদেও নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, এ জায়গাগুলোতে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ সাধারণ অবস্থায় যদি নামাজের বিকল্প ভালো জায়গা থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরপত্তহীনতাসহ অন্যান্য কারণে যদি নামাজ আদায়ের বিকল্প জায়গা না থাকে, তাহলে এসব জায়গায়ও নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
ওএফএফ