যৌন সম্পর্কই এইচআইভি ছড়ানোর একমাত্র কারণ নয়
সানজানা রহমান যুথী এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) হলো এমন একটি ভাইরাস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে, শরীরের সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এটি এইচআইভি/এইডসে (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) পরিণত হয়। বাংলাদেশে ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’ স্লোগানে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরির দীর্ঘ ক্যাম্পেইন চলেছে। তবুও মানুষের মধ্যে এই অসুখটি নিয়ে বেশ কিছু ট্যবু থেকে গেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো – কারও এইডস হওয়া মানেই তার চরিত্রে সমস্যা। এদিকে বাংলাদেশে গত দুই বছরে উদ্বেগজনক হারে এইচআইভি সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত অসাবধানতার জন্যই এইচআইভি হয়ে থাকে। আগামীকাল (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে এইডসের কারণ সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন অলাভজনক সংস্থা- ‘এসো সচেতন হই সোসাইটি’র চিফ কনসালটেন্ট ডা. এস. এম. নওশের। জাগো নিউজ: এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়? এস. এম. নওশের: সাধারণত এইচআইভি ছড়ায় শরীরের নির্দিষ্ট কয়েকটি তরল পদার্থের মাধ্যমে। যেমন — রক্ত, বীর্য, যোনীস্রাব, মায়ের বুকের দুধ। যদি এইডস রোগীর রক্ত বা শরীরের তরল অ
সানজানা রহমান যুথী
এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) হলো এমন একটি ভাইরাস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে, শরীরের সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এটি এইচআইভি/এইডসে (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) পরিণত হয়।
বাংলাদেশে ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’ স্লোগানে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরির দীর্ঘ ক্যাম্পেইন চলেছে। তবুও মানুষের মধ্যে এই অসুখটি নিয়ে বেশ কিছু ট্যবু থেকে গেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো – কারও এইডস হওয়া মানেই তার চরিত্রে সমস্যা।
এদিকে বাংলাদেশে গত দুই বছরে উদ্বেগজনক হারে এইচআইভি সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত অসাবধানতার জন্যই এইচআইভি হয়ে থাকে। আগামীকাল (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে এইডসের কারণ সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন অলাভজনক সংস্থা- ‘এসো সচেতন হই সোসাইটি’র চিফ কনসালটেন্ট ডা. এস. এম. নওশের।
জাগো নিউজ: এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়?
এস. এম. নওশের: সাধারণত এইচআইভি ছড়ায় শরীরের নির্দিষ্ট কয়েকটি তরল পদার্থের মাধ্যমে। যেমন — রক্ত, বীর্য, যোনীস্রাব, মায়ের বুকের দুধ। যদি এইডস রোগীর রক্ত বা শরীরের তরল অন্য ব্যক্তির রক্তপ্রবাহ বা মিউকাস ঝিল্লিতে প্রবেশ করে, তখন সংক্রমণ ঘটে। এছাড়া অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, আক্রান্ত ব্যক্তির একই সুঁই বা ইনজেকশন ব্যবহার, মা থেকে শিশুর মধ্যে (গর্ভকালীন, প্রসব বা দুধের মাধ্যমে) এবং দূষিত রক্ত বা রক্তজাত পণ্যের মাধ্যমেও এইচআইভি ছড়ায়।
জাগো নিউজ: অনেকের মধ্যেই এইচআইভি ছড়ানো নিয়ে ভুল ধারণা দেখা যায়। আপনার অভিজ্ঞতায় কোন ভুল ধারণাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে?
এস. এম. নওশের: অনেকের মধ্যেই এইচআইভি ছড়ানো নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো — এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলালে, আলিঙ্গন করলে, একই বাসন ব্যবহার করলে সংক্রমণ হয়; মশা কামড়ালে এইচআইভি ছড়ায়; থুথু, ঘাম বা অশ্রু দিয়ে ভাইরাস ছড়ায়; কিংবা কাছে বসলে বা স্পর্শ করলে সংক্রমণ হয়। বাস্তবে এগুলোর কোনোটিই সত্য নয়।
জাগো নিউজ: সুঁই বা ধারালো যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি কতটা?
এস. এম. নওশের: সুঁই বা ধারালো যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি খুব বেশি। কারণ ব্যবহৃত সুঁইয়ের ভেতরে থাকা রক্তসহ ভাইরাস সরাসরি অন্য ব্যক্তির রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে। তাই এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
জাগো নিউজ: মা-শিশুর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ কীভাবে ঘটে এবং কোন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি বাড়ে?
এস. এম. নওশের: সাধারণত গর্ভকালীন, প্রসবের সময় বা বুকের দুধের মাধ্যমে মা থেকে শিশুর শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে। পাশাপাশি মা চিকিৎসা না নিলে, ভাইরাল লোড বেশি হলে, দীর্ঘ প্রসব বা ক্ষতযুক্ত প্রসব হলে এবং মিশ্র ফিডিং (দুধের সঙ্গে অন্য খাবার) দিলে শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তবে সঠিক চিকিৎসা নিলে ঝুঁকি ১ শতাংশের নিচে নামানো সম্ভব।
জাগো নিউজ: এইচআইভি থেকে এইডসে রূপ নেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে?
এস. এম. নওশের: এইচআইভি শরীরের সিডি৪ সেল ধীরে ধীরে নষ্ট করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সিডি৪ খুব কমে গেলে এবং একাধিক সংক্রমণ দেখা দিলে তা এইডসে রূপ নেয়। তবে সঠিক চিকিৎসা (এআরটি) নিলে এইডসের ঝুঁকি কমানো যায়।
জাগো নিউজ: ঝুঁকি কমাতে সাধারণ মানুষকে কোন আচরণ বা সতর্কতা সম্পর্কে সবচেয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
এস. এম. নওশের: যৌন সম্পর্কের আগে সবসময় কনডম ব্যবহার করা, সুঁই/ইনজেকশন শেয়ার না করা, রক্ত নেওয়ার আগে এইচআইভি পরীক্ষা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি নিয়মিত এসটিআই চেকআপ এবং এইচআইভি পজিটিভ হলে এআরটি শুরু করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভুল ধারণা দূর করা।
এএমপি/জেআইএম
What's Your Reaction?