জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বিগত সময়ে যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রে সূতিকাগার হয়েছে এই রংপুর। চব্বিশের আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল এই রংপুর। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে এই রংপুর থেকেই। অথচ এখনও এই অঞ্চলে বৈষম্য দূর হয়নি। রংপুরের মানুষ আর কোনো বৈষম্য প্রত্যাশা করে না।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ‘জুলাই পদযাত্রা’ শেষে রংপুরের ডিসির মোড়ে আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, আমাদের ন্যায্য যতটুকু পাওনা ততটুকুই সরকারের কাছে পেতে চাই।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীর পানি, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বৈষম্যের শিকার হয়েছে রংপুর। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও কৃষিসহ প্রত্যেকটা খাতে রংপুরের মানুষকে বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে হবে।
শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, রংপুরের পুত্রবধূ শেখ হাসিনাকে যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শহীদ আবু সাঈদের আত্মা শান্তি পাবে না। তার শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রংপুরের রাজপথ ছাড়বে না ছাত্র-জনতা।
আখতার হোসেন বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, রংপুরের জনগণ তাদের রাজপথেই প্রতিহত করবে। জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।
জাতীয় পার্টিকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, জাতীয় পার্টি রংপুরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের দমন করতে চায়। রংপুরে জাতীয় পার্টির করা মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে রংপুর থেকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান আখতার হোসেন।
পথসভায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বিগত এক বছরে আমাদের যত আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেগুলোর আমরা প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল পাইনি। এ কারণে আমরা মনে করি, আগামীর বাংলাদেশে বিচার, সংস্কার ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য আবশ্যক ছিল। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি এই জুলাই মাসে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় জনগণের দুয়ারে যাবে, জনগণের কথা শুনবে, জনগণের কথাগুলো বলবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদ আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। পদযাত্রাটি লালবাগ, খামার মোড়, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি, পায়রা চত্বর হয়ে ডিসির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রথম দিনে রংপুর শহরে ৬ কিলোমিটার পদযাত্রা করেছেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক এই কর্মসূচি চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা করেন নেতারা। কবর জিয়ারত শেষে তারা শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে গাইবান্ধায় রওনা হন। গাইবান্ধায় পথসভা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে এসে পৌঁছান নেতাকর্মীরা। বিশ্রামের পর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় রংপুর শহরের পার্ক মোড় থেকে পুনরায় পদযাত্রা শুরু হয়।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম-মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ও সিনিয়র যুগ্ম-সদস্যসচিব তাসনিম জারার নেতৃত্বে পদযাত্রায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অন্য নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জিতু কবীর/এমএন/এমএস