রক্তচাপ সম্পর্কে যা জানা জরুরি

9 hours ago 4

রক্তচাপ (Blood Pressure) – এ শব্দটি প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে শুনেছি। ডাক্তার দেখাতে গেলে বা ওষুধের বিজ্ঞাপনে আমরা এই শব্দের মুখোমুখি হই। কিন্তু অনেকেই ঠিক বুঝি না রক্তচাপ আসলে কী, এটা কেন হয়, আর কীভাবে এটা আমাদের শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে।

রক্তচাপ মূলত আমাদের হৃৎপিণ্ড ও রক্তপ্রবাহের অবস্থা জানায়। এটা ঠিক মতো না প্রবাহিত হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রক্তচাপ সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা থাকা আমাদের সবার জন্যই জরুরি।

চলুন জেনে নিই রক্তচাপ কী। 

রক্তচাপ

আমাদের শরীরের রক্তনালিগুলোর ভিতরে রক্ত যে চাপ দিয়ে প্রবাহিত হয়, সে চাপকেই রক্তচাপ বলে।

আমাদের হার্ট প্রতি মিনিটে একাধিকবার সংকুচিত হয়ে রক্ত পাম্প করে। এই পাম্প করা রক্ত যখন ধমনি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে যায়, তখন সেই প্রবাহে যে চাপ তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে রক্তচাপ।

রক্তচাপ দুই ধরনের হয়ে থাকে।

রক্তচাপ মাপার সময় দুটি সংখ্যা দেখা যায়, যেমন : ১২০/৮০  মিলিমিটার মার্কারি (mmHg)। এই দুটি সংখ্যার আলাদা মানে আছে :

সিস্টলিক চাপ (উচ্চ চাপ) – প্রথম বা উপরের সংখ্যা। এটা তখন হয়, যখন হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয়ে সারা শরীরে রক্ত পাঠায়।

ডায়াস্টলিক চাপ (নিম্ন চাপ) – দ্বিতীয় বা নিচের সংখ্যা। এটা তখন হয়, যখন হৃৎপিণ্ড বিশ্রামে থাকে। মানে নতুন রক্ত নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

আরও পড়ুন : প্রতিদিনের যেসব অভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে আমাদের অজান্তেই

আরও পড়ুন : নিজেই বাড়াচ্ছেন স্ট্রোকের ঝুঁকি, জানুন কীভাবে

উদাহরণস্বরূপ, যদি রক্তচাপ হয় ১২০/৮০  মিলিমিটার মার্কারি, তাহলে ১২০ হলো সিস্টলিক চাপ আর ৮০ হলো ডায়াস্টলিক চাপ।

সাধারণ রক্তচাপ কত হওয়া উচিত?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের জন্য স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো প্রায় ১২০/৮০  মিলিমিটার মার্কারি। এটা থেকে কিছুটা কম বা বেশি হলেও সমস্যা হয় না। তবে যদি খুব বেশি বা খুব কম হয়ে যায় তখন সেটা সমস্যা।

উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) কী?

যখন রক্তচাপ অনেক সময় ধরেই বেশি থাকে, তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা **হাইপারটেনশন** বলা হয়। যেমন, যদি বারবার 140/90 mmHg বা তার বেশি হয়।

এটা অনেক বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এর ফলে-

- হার্ট অ্যাটাক হতে পারে

- স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে

- কিডনির ক্ষতি হতে পারে

- চোখের সমস্যা হতে পারে

উচ্চ রক্তচাপ অনেক সময় ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, কারণ এতে অনেক সময় কোনো উপসর্গ (লক্ষণ) দেখা যায় না কিন্তু ভিতরে ভিতরে শরীরের ক্ষতি হতে থাকে।

নিম্ন রক্তচাপ (Hypotension) কী?

যখন রক্তচাপ খুব নিচে নেমে যায় (যেমন- ৯০/৬০  মিলিমিটার মার্কারি বা তার নিচে) তখন তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে।

নিম্ন রক্তচাপে হতে পারে:

-  মাথা ঘোরা

- দুর্বল লাগা

- চোখে অন্ধকার দেখা

- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

রক্তচাপ ঠিক রাখার উপায় কী?

রক্তচাপ ঠিক রাখার জন্য কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা ভালো : 

- নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা

- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমানো

- তাজা শাকসবজি ও ফল খাওয়া

- ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকা

- পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস কমানো

- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

- নিয়মিত রক্তচাপ মাপা

আরও পড়ুন : হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা কি বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত

আরও পড়ুন : নীরবে শরীরে যে ৭ ক্ষতি করছে ইউরিক অ্যাসিড

রক্তচাপ এমন একটি বিষয়, যেটা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে আমাদের শরীর দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে। অনেকেই রক্তচাপ বাড়লে বা কমলে বুঝতে পারেন না, তাই নিয়মিত চেক করা খুব জরুরি। ছোট ছোট অভ্যাস বদলেই রক্তচাপকে সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

মনে রাখবেন- আপনি যদি কখনো মাথা ব্যথা, দুর্বল লাগা, চোখে ঝাপসা দেখা বা বুক ধড়ফড়ের মতো উপসর্গ অনুভব করেন তবে একবার রক্তচাপ মেপে দেখা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

সতর্কতা : এই প্রতিবেদনটি একটি সাধারণ বিশ্লেষণ। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

Read Entire Article