সাবিনা খাতুনসহ সিনিয়র কয়েকজন ফুটবলারকে বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়ে জাতীয় দল গড়েছেন ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার। ‘তারুণ্যই ভবিষ্যৎ’- এই স্লোগান সামনে এনে কৌশলে পিটার বাদ দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া ফুটবলারদের।
লম্বা সময় জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন সাবিনা খাতুন। সাবিনা বাদ পড়ার পর অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পেয়েছেন আফঈদা খন্দকার প্রান্তি। এ সময়ে দেশের সেরা এই ডিফেন্ডার এরই মধ্যে চার ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। পিটার বাটলার আফঈদার মধ্যে অধিনায়কের দারুণ গুণ দেখছেন। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করেই মারিয়া, মনিকা, ঋতুপর্ণার মতো সিনিয়র খেলোয়াড় থাকতেও মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ১৯ বছরের আফঈদাকে বেছে নিয়েছেন পিটার বাটলার।
আঁখি খাতুন চলে যাওয়ার পর অনেকেই জাতীয় দলের রক্ষণে বড় শূন্যতা অনুভব করেছিলেন। তবে আফঈদা সেই শূন্যতা পূরণ করেছেন দ্রুতই। বিদ্রোহীদের সামনে থাকা অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনও শেষটা দেখে ফেলছেন হয়তো। এখন জাতীয় ও অনূর্ধ্ব-২০ দলের রক্ষণের প্রধান ভরসা আফঈদা খন্দকার প্রান্তি।
আফঈদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ চারটি ম্যাচ খেলেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সিনিয়র দলে অভিষেক হয়েছিল আফঈদার। অভিষেকেই গোল করেছিলেন এই ডিফেন্ডার। এ পর্যন্ত জাতীয় দলের জার্সিতে চারটি গোল আছে বিকেএসপির সাবেক এই শিক্ষার্থীর।
বাংলাদেশ এ বছর চারটি ম্যাচ খেলে চারটি গোল করেছে, যার দুটিই এসেছে এই ডিফেন্ডারের কাছ থেকে। এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই খেলতে জাতীয় দল এখন মিয়ানমারে। ঢাকা ত্যাগের আগে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা, ডিফেন্ডার হয়েও গোল করাসহ নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আফঈদা খন্দকার প্রান্তি।
জাগো নিউজ: ২০২৩ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলছেন। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন এ বছর গোড়ার দিকে। কেমন উভোগ করছেন?
আফঈদা খন্দকার: আসলে এটা উপভোগের বিষয় না। এটা দায়িত্ব। খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বটা আরো বাড়ে। আমি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনেই সচেষ্ট থাকি। যেহেতু বয়সভিত্তিক দলেও অধিনায়কত্ব করেছি, তাই এ দায়িত্ব আমার কাছে নতুনও নয়।
জাগো নিউজ: এই দলে আপনার চেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় আছেন কয়েকজন। মাঠে নেতৃত্ব দিতে তাতে কোনো সমস্যা হয়?
আফঈদা: না। কারণ আমাকে সিনিয়র আপুরা যেমন সহযোগিতা করেন, তেমন জুনিয়ররাও। মাঠে যখন খেলি তখন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েই ভালো করার চেষ্টা করি।
জাগো নিউজ: আপনি এখন দেশের ফুটবলের প্রধান ডিফেন্ডার। আপনার গোলও আছে কয়েকটি। এ পর্যন্ত কোন কোন দেশের বিপক্ষে কয়টি গোল করেছেন?
আফঈদা: ২০২৩ সালে ঢাকায় এসেছিল সিঙ্গাপুর। দুই ম্যাচের সেই প্রীতি সিরিজে আমার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল। অভিষেক ম্যাচেই আমি গোল করেছি। এরপর দ্বিতীয় গোল করেছি সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে। সর্বশেষ দুই গোল এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই প্রীতি ম্যাচে।
জাগো নিউজ: রক্ষণের খেলোয়াড় হয়েও আপনি গোল করতে পারদর্শী। গোল করার আপনার কোনো লক্ষ্য থাকে? নাকি সুযোগ বুঝে করেন?
আফঈদা: আমার প্রধান কাজ তো দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচানো। তারপরও জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার দুই বছরের চারটি গোল করেছি। আমি গোল করতেও পছন্দ করি।
জাগো নিউজ: এমন কি হয় গোল করার নেশায় ওপরের দিকে উঠে যান? মানে গোলের নেশায় পেয়ে বসে!
আফঈদা: আসলে সেটা নির্ভর করে প্রতিপক্ষ কেমন তার ওপর। যদি প্রতিপক্ষ দূর্বল হয় তাহলে আমার মধ্যে গোল করার ইচ্ছা জাগে। ওপরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে। তবে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলে আমার মনযোগ থাকে রক্ষণেই।
জাগো নিউজ: দৈহিকভাবে উচ্চতার কারণে আপনি একটা সুবিধা পান। তো এখন পর্যন্ত করা চার গোল কি সেই সুবিধা নিয়ে করেছেন? নাকি আক্রমণ থেকেও গোল আছে?
আফঈদা: আমি যে চারটি গোল করেছি তার মধ্যে একটির উৎস ছিল কর্নার। বাকি তিনটা গোল আমার দুর থেকে শট নিয়ে করা। বয়সভিত্তিক দলেও আমার ৫ গোলের একটি মাত্র কর্নার থেকে।
জাগো নিউজ: সব অভিষেকই আপনার জন্য সুখকর। জাতীয় দলে অভিষেকে গোল করেছেন, অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেও গোল করেছেন। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আফঈদা: মাঠে যখন খেলি তখন তো খেলোয়াড়। রক্ষণ সামলাতে চেষ্টা করি, সুযোগ পেলে গোল করি। গোল তখনই করতে পারি যখন দলের অন্যরা সহযোগিতা করে। দল ভালো খেলে।
জাগো নিউজ: অনেক দিন পর বাংলাদেশ এশিয়ান পর্যায়ের কোনো প্রতিযোগিতায় খেলবে মিয়ানমারে। আপনারও আরো বড় আসরে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেমন মনে হয়?
আফঈদা: ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা চীনে এশিয়ান গেমসে খেলেছি। এরপর এখন এশিয়ান প্রতিযোগিতা এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে খেলবো। এখানে চ্যালেঞ্জটা অবশ্যই বেশি। আর অধিনায়ক হিসেবেও আমার প্রথম বড় প্রতিযোগিতা। আমাকে আরো ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনারা সব সময় বলে থাকেন দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর সাথে খেলে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে, অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে। সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে খেলে অভিজ্ঞতা কেমন বেড়েছে?
আফঈদা: অবশ্যই অভিজ্ঞতা বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডান শক্তিতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। দুই দলের সাথেই ড্র করেছি। এই দুই ম্যাচে আমাদের অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস দুটোই বেড়েছে যা কাজে লাগবে মিয়ানমারের এই এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে।
জাগো নিউজ: এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আমাদের প্রতিপক্ষ তিন দলের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে আপনার?
আফঈদা: আমার নেই। বাহরাইন, মিয়ানমার ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে আমি প্রথম খেলবো। তবে বাংলাদেশ দলের খেলার অভিজ্ঞতা আছে মিয়ানমারের বিপক্ষে। আমি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলেছি।
জাগো নিউজ: বলেছেন এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করার লক্ষ্য আপনাদের। আমরাতো আগে কখনো এই প্রতিযোগিতায় একটি ম্যাচও জিততে পারিনি। তাহলে কি কোয়ালিফাই করা সম্ভব?
আফঈদা: আমরাতো চেষ্টা করবো। মানুষ চাইলে অনেক কিছুই পারে। আমরা ইন্দোনেশিয়া-জর্ডানের সাথে খেলেছি। এ পর্যায়ের দেশের বিপক্ষে আমাদের খেলা কম হয়। এই দলগুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণাই ছিল না। এখন ধারণা হয়েছে।
জাগো নিউজ: তো দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দলগুলোর বিপক্ষে খেলে কেমন ধারণা হয়েছে আপনার। আমরা কোন অবস্থানে আছি?
আফঈদা: এশিয়ার যে দেশগুলো বিশ্বকাপ, অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়মিত খেলে তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে শক্তি ও সামর্থ্যে। তবে বাকি যে দেশগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে তেমন পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। উনিশ-বিশ আর কি।
জাগো নিউজ: মিয়ানমারে কি ফলাফল করতে পারলে আপনি অধিনায়ক হিসেবে সন্তুষ্ট হবেন?
আফঈদা: অবশ্যই কোয়ালিফাই করলে সন্তুষ্ট হবো। আমাদের সেই লক্ষ্য নিয়েই চেষ্টা করতে হবে।
জাগো নিউজ: সাবিনা, কৃষ্ণা, মাসুরা, সানজিদারা নেই এই দলে। তারা থাকলে দল আরো শক্তিশাল হতো কি?
আফঈদা: এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
জাগো নিউজ: আপনাদের জন্য শুভ কামনা থাকলো।
আফঈদা: আপনাকে ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/