রাওয়ালপিন্ডির পারফরম্যান্স চেন্নাইতে টেনে আনতে পারবে টাইগাররা?

1 day ago 5

রাত পোহালেই চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ আর ভারতের ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টায় শুরু হবে প্রথম টেস্ট ম্যাচ।

সবার জানা, আগে কখনোই ভারতের সাথে টেস্টে পারেনি বাংলাদেশ। জয়তো বহূদুরে, ব্যাট ও বলে লড়াই করে পরাজয় এড়ানোর কৃতিত্বও নেই। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার টিম বাংলাদেশের সাথে আছে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার রসদ।

অতিবড় সমালোচকও মানছেন, এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুন খেলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। একটা দল হয়ে খেলার চেষ্টা ছিল। টিম পারফরমেন্সও হয়েছে বেশ ভাল। অনেকেরই মত, ২ বছর আগে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারানোর টেস্ট ম্যাচটি ছাড়া দেশের বাইরে বাংলাদেশ দলকে আর কখনো এত ভাল খেলে প্রতিপক্ষকে চরমভাবে নাস্তানাবুদ করতে দেখা যায়নি।

সেই অবিস্মরনীয় জয়ের পর সবার প্রশংসাধন্য শান্ত বাহিনী। হেড কোচ হাথুরুসিংহে এবারের বাংলাদেশ দলকে তার দেখা সবচেয়ে পরিপূর্ণ দল বলেও অভিহিত করেছেন। হাথুরুর এ মন্তব্যকে অতিরঞ্জিত বলার যৌক্তিকতাও কম।

কারণ, পাকিস্তানের সাথে সত্যিই একটা পরিণত দলের মতই খেলেছে বাংলাদেশ। তবে ভারতের সাথে ২ টেস্টের সিরিজেই বোঝা যাবে, সাদমান, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন, মিরাজ, তাসকিন, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানারা আসলে কতটা পরিপূর্ণ হয়েছেন?

এটা সত্য, রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ব্যাটার ও বোলাররা পরিণত পারফরমারের মত খেলেছেন। ২ টেস্টে একবার করে হলেও সব পজিসনের পারফরমাররা ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

যখন বোলারদের ব্রেকথ্রু ও উইকেটের পতন ঘটানো দরকার ছিল তখন বোলাররা তা করে দেখিয়েছেন। কখনো পেসার ও কোনো সময় স্পিনাররা কাজের কাজ করে দিয়েছেন। দুই টেস্টে কখনো পেসার আবার কখনো স্পিনারদের হাত ধরে ম্যাচে টাইগারদের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার যখন ব্যাটারদের ব্যাটে রান দরকার পড়েছে, ঠিক তখন ওপেনার, টপ, মিডল ও লেট অর্ডাররা রান করে দিয়েছেন।

রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়া দুই টেস্টের চালচিত্র এক নজরে দেখলেই বোঝা যাবে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কিভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করেছেন? এবার রাওয়ালপিন্ডির যে স্টেডিয়ামে ১০ ও ৬ উইকেটে পাকিস্তানীদের চরমভাবে পর্যদুস্ত করেছে বাংলাদেশ, ২০২০ সালে ঠিক একই মাঠে পাকিস্তানীদের করা ৪৪৫ রানের জবাবে ইনিংস ও ৪৬ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ।

৪ বছর পর একই মাঠে এবার প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের জবাবে শান্তর দল উল্টো ১১৭ রান লিড নিয়ে ৫৬৫ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলো।

যা সম্ভব হয় ব্যাটারদের সময় মত জ্বলে ওঠায়। ওপেনার সাদমান ইসলামের ৯৩, মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের লড়াকু ইনিংস আর মুমিনুল হক (৫০), লিটন দাস (৫৫) আর মেহেদি হাসান মিরাজের (৭৭) তিন-তিনটি ফিফটির ওপর ভর করে। আবার তারপর পাকিস্তানীদের মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট করে ম্যাচ জেতার পথ সুগম করেন বোলারারা; বিশেষ করে ২ স্পিনার মেহেদি মিরাজ (৪/২১) ও সাকিব (৩/৪৪)। আর তাতেই টেস্ট জিততে দরকার পড়ে মাত্র ৩০ রানের।

একইভাবে দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানীদের ২৭৪ রানের জবাবে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছিল, ঠিক সেই ভাঙ্গা স্তুপের মাঝে দাড়িয়ে লিটন দাস ও মেহেদি মিরাজের সপ্তম উইকেটের অনমনীয় দৃঢ়তা ও লড়াকু ব্যাটিংয়ে দল ম্যাচে ফেরে টাইগাররা।

মাত্র ১২ রানে পিছিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করা শান্তর দল পরেরবার পাকিস্তানীদের দাঁড়াতেই দেয়নি। বোলারদের বিশেষ করে, ২ পেসার হাসান মাহমুদ আর নাহিদ রানার বারুদে বোলিংয়ে ম্যাচ জয়ের মঞ্চ তৈরি করে ফেলে। তাদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে তৈরি হয় জয়ের মঞ্চ।

ভারতের মাটিতে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, জসপ্রিত বুমরাহ আর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের গড়া ভারতীয় বাহিনীর সাথে পাকিস্তানে দেখানো সাফল্যের পূনরাবৃত্তি ঘটানো সহজ কাজ নয়। বেশ কঠিন। চ্যালেঞ্জিং। অধিনায়ক শান্ত বারবার বলছেন, ভারতের সাথে সিরিজটি হবে চ্যালেঞ্জিং।

সে চ্যালেঞ্জে অতিক্রম করতে গেলে আবারো সবার চেষ্টা ও টিম পারফরমেন্স দরকার। ব্যাটার ও বোলারদের কাজগুলো করতে হবে ঠিক আগের মত। ওপেনিংয়ে অন্তত একজনকে নতুন বলের শাইন নষ্ট করার কাজটি করতে হবে। যেমন সাদমান করেছিলেন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে। তারপর মুমিনুল, মুশফিক, লিটন ও সাকিব-মিরাজকে দায়িত্ব নিয়ে জসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ, রবিচন্দ্রন অশ্চিন, রবিন্দ্র জাদেজা আর কুলদিপ যাদবকে সামলাতে হবে ধৈর্য্য, মনোযোগ, মনোসংযোগ নিয়ে। এই ৫ জনের লম্বা সময় উইকেটে থাকা ও দীর্ঘ ইনিংস খেলার ওপরই নির্ভর করবে অনেক কিছু।

এআরবি/আইএইচএস/

Read Entire Article