রাকসুতে ভিপি পদে লড়ছেন ১৮ প্রার্থী, আলোচনায় যারা

4 hours ago 3

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ১০ জন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, সাবেক সমন্বয়ক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘোষিত প্যানেলভুক্ত এবং ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই ও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ায় এরই মধ্যে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন।

ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু থেকেই আলোচনা চলছে। কে হবেন এবারের নির্বাচনের হেভিওয়েট ভিপি প্রার্থী, কার পাল্লা ভারী থাকবে, কে রাজনৈতিক সুবিধা বেশি পাবেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে কার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু, এসব নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

প্যানেলের ভিপি প্রার্থী যারা

রাকসুতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ থেকে ভিপি পদে লড়ছেন শেখ নূর উদ্দিন আবীর। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব লড়ছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে। ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের হয়ে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন ফুয়াদ রাতুল। এছাড়া ‘রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে লড়ছেন মেহেদী হাসান মারুফ।

এছাড়া ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাসিন খান। ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’ প্যানেলের হয়ে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাসুদ কিবরিয়া। ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী মাহবুব আলম। তাওহীদুল ইসলাম লড়ছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে এবং ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’ এর হয়ে লড়াই করছেন মুহিব।

স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী যারা

প্যানেলভুক্তদের পাশাপাশি ভিপি পদে স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন ১০ জন প্রার্থী। তারা হলেন, নোমান ইমতিয়াজ, সাগর আহমেদ মিয়া, মো. নূর, অদ্রীব নাহা উৎস, মো. আবদূর বারিক, মেহেদী হাসান সুমন, শাকিল মিয়া এবং মো. বিল্লাল হুসাইন।

তবে প্রচার-প্রচারণার মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রার্থীরা। ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণার নানা কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতিই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে। ফলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের মধ্যেই হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

এদিকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর কারণে ভিপি প্রার্থীদের তালিকা কিছুটা সংক্ষিপ্ত হয়ে এসেছে।

আলোচনায় যারা

রাকসু নির্বাচনে ১৮ জন ভিপি প্রার্থী থাকলেও ভোটারদের নজরে রয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী। শিবির ও ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা সংগঠনের রাজনৈতিক ভিত্তির কারণে হেভিওয়েট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে আসা সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব ও নারী নেতৃত্বে ভিপি পদে লড়াই করা তাসিন খানও আলোচনার তুঙ্গে রয়েছেন।

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ থেকে ভিপি পদে লড়বেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শেখ নূর উদ্দিন আবির। তিনি বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে এবং আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের প্যানেলের বৈচিত্রতা সম্পর্কে সবাই জানেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য আমরা যে সংগ্রাম করেছি সেগুলো বিবেচনা করেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রচণ্ড ভালোবাসা দিচ্ছেন। ডাকসু ও জাকসুতে আমরা কিছু বিরূপ প্রভাব দেখেছি, সেগুলো রাকসুতে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমাদের পরিবেশ ও সংস্কৃতি তাদের থেকে আলাদা।

ছাত্রশিবিরের সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শাখা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি বলেন, রাকসুতে এবার আমাদের প্যানেল সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক। যেখানে যোগ্যতা, দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণই প্রাধান্য পেয়েছে। নারী শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সংখ্যালঘু, আহত জুলাই যোদ্ধা, সবাই রয়েছেন আমাদের প্যানেলে। আমরা কারো ওপর ইসলামের আদর্শ চাপিয়ে দিতে চাই না। আমি নির্বাচিত হলে, ঠিক যেমন ছাত্রশিবিরের শিক্ষার্থীদের ভিপি হবো, তেমনি সকল ধর্ম ও মতের সব শিক্ষার্থীদেরও ভিপি হবো। যে হিজাব করতে চায় এবং যে চায় না তারও ভিপি হবো। শিবিরকে ঘিরে যে নেতিবাচক মিথ প্রচলিত ছিল, তা ভেঙে গেছে। এবার শিক্ষার্থীরাই আমাদের সমর্থন ও আস্থার প্রতিফলন দেখাবেন।

‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, আমরা জুলাইয়ের আগেও ক্যাম্পাসে নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছি, তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই মনে করি, শিক্ষার্থীরা যদি নির্বাচিত করেন তবে আমরা আরও দুর্বার গতিতে কাজ করে যেতে পারব। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন অ্যাকটিভিজম করেছি, এটাও আমাদের শক্তি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটও একটি বড় শক্তি। দুইয়ের সমন্বয়ে যদি কাজ করতে পারি, তবে আমি আমার প্যানেল ও নিজেকে নিয়ে শতভাগ আশাবাদী।

‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল বিশেষভাবে নজর কেড়েছে প্রথমবারের মতো নারী ভিপি প্রার্থীর কারণে। এই প্যানেল থেকে ভিপিপ্রার্থী তাসিন খান বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমার কাছে নারী বা পুরুষ হিসেবে ছিল না, যখন আমি ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন নিজেকে কেবল একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই দেখেছি। প্যানেলে কিছু অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থী পেয়েছি। সবার সহযোগিতা থাকলে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো। এছাড়াও রাকসু একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হলেও এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে, আর প্রতিটি দলের নিজস্ব মতাদর্শ থাকায় শেষ পর্যন্ত রাকসু একটি মতাদর্শিক দ্বন্দ্বের রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া

রাকসু নির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০৫ জন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি ভোটকেন্দ্রে স্থাপিত ৯৯০টি বুথে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রাকসুতে ২৪৮ জন, সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন এবং ১৭টি আবাসিক হল সংসদে ৫৯৭ জন প্রার্থী লড়ছেন। ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালট বাক্সগুলো কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আনা হবে এবং সেখানেই ভোট গণনা করা হবে, যা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন স্তরের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যেখানে দুই হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দায়িত্ব পালন করবে।

মনির হোসেন মাহিন/এমএন/এএসএম

Read Entire Article