রাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএসের কার বাড়ি কোথায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নির্বাচনে শীর্ষ ৩টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন— সহসভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দীন আম্মার ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এস এম সালমান সাব্বির।

এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর প্রার্থীরা। আর জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত সাবেক সমন্বয়ক ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে রাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার পর থেকেই পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে উচ্ছ্বাসের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

ফলাফল অনুযায়ী, ভিপি পদে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর মোস্তাকুর রহমান জাহিদ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সালাহউদ্দীন আম্মার পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট, আর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর এস এম সালমান সাব্বির পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭১ ভোট।

মোস্তাকুর রহমান জাহিদ : সহসভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনোমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাহিদের বাড়ি নীলফামারীর সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নে। তার বাবা মো. মোজাহারুল হক একজন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী হিসেবে পরিচিত জাহিদ ২০১৫ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

তিনি স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৭৬ এবং স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে ৩.৯২ পেয়ে নিজ বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপও পান।

শিক্ষাজীবনে তিনি কৃষি বিজ্ঞানভিত্তিক নানা গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার। সহপাঠীদের কাছে তিনি শান্ত, পরিশ্রমী ও পরিণত মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত।

সালাহউদ্দীন আম্মার : সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দীন আম্মার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি খুলনা জেলায়। বাবা মো. আখতারুজ্জামান পেশায় ব্যবসায়ী, মা রোকেয়া খানম একজন স্কুল শিক্ষিকা।

আম্মার জানান, তার পরিবার জামায়াত-শিবির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। ছোটবেলায় তিনি ঢাকার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০২০ সালেই তিনি সাথী হিসেবে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন আন্দোলন ও সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় হন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার নেতৃত্বগুণ প্রকাশ পায়। সে সময় তার সাহসী অবস্থান ও উদ্দীপনামূলক স্লোগান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ফলে তিনি সহপাঠীদের কাছে ‘স্লোগান মাস্টার’ নামে পরিচিতি পান।

২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সংগঠক ও মাঠের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের চাপ ও হুমকির মুখেও তিনি স্থির ছিলেন।

তার সহপাঠীরা জানান, আম্মার সংগঠনের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও মনোযোগী। বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে তিনি দ্রুত পরিচিতি পান।

এস এম সালমান সাব্বির : সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এস এম সালমান সাব্বির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শের-ই বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রাজশাহী সদর উপজেলায়।

সাব্বির রাজশাহী ক্যাডেট মাদ্রাসা ও মসজিদ মিশন একাডেমিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করে ২০২০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ইউনিটের সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন।

সাব্বির সমাজসেবা, রক্তদান কর্মসূচি ও বিভিন্ন সচেতনতা কার্যক্রমের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি পরিচিত একজন সংগঠক ও মানবিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) হল সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩টি পদে মধ্যে ভিপি-জিএসসহ ২০টিতে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেল। বাকি ৩টি পদের মধ্যে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহ উদ্দীন আম্মার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের নার্গিস আক্তার (জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়ার), বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক পদে তোফায়েল আহমেদ তোহা নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে ১৭টি হলের মোট ২৫৫টি পদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা ২৩৪টিতেই বিজয়ী হয়েছেন। নিশ্চিত করেছেন ভিপি, জিএস, এজিএসসহ শীর্ষ সব পদ।