রাজপরিবারের পরিত্যক্ত বাড়িতে মিললো ‘সুড়ঙ্গ’, বন্ধ ভাঙার কাজ
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের পরিত্যক্ত একটি জরাজীর্ণ একতলা বাড়ি ভাঙতে গিয়ে পাওয়া গেছে সুড়ঙ্গসদৃশ কাঠামো। এরপরই বন্ধ রাখা হয়েছে ভাঙার কাজ। জেলা প্রশাসন লাল নিশানা টাঙিয়ে ভবনটির অবশিষ্ট অংশ রক্ষা করেছে। বিষয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরকে জানিয়ে তদন্তের আবেদন করা হয়েছে। বাড়িটি রাজশাহীর ঐতিহ্যের একটি অংশ। প্রায় দেড়শ বছর আগে এটি ছিল দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাসভবন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল মজিদ জানান, সত্তরের দশকে রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় থেকেই এ বাড়িটি তিনি দেখে আসছেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ভাঙার খবর শুনেই ছুটে এলাম। একসময়কার রাজবাড়ির অংশ এমনভাবে হারিয়ে যেতে দেখাটা কষ্টের।’ ১৯৮১ সালে বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার পর সম্প্রতি জেলা প্রশাসন বাড়িটি এক লাখ ৬১ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে। ঠিকাদার এটি ভাঙার কাজ শুরু করলে মাটির নিচে সুড়ঙ্গের মতো কাঠামো দেখা যায়। ঠিকাদারের প্রতিনিধি মিজানুজ্জামান অপু বলেন, ‘এগুলো আসলে সুড়ঙ্গ নয়। তখনকার দিনের ভবনগুলোতে এমন নির্মাণশৈলী দেখ
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের পরিত্যক্ত একটি জরাজীর্ণ একতলা বাড়ি ভাঙতে গিয়ে পাওয়া গেছে সুড়ঙ্গসদৃশ কাঠামো। এরপরই বন্ধ রাখা হয়েছে ভাঙার কাজ।
জেলা প্রশাসন লাল নিশানা টাঙিয়ে ভবনটির অবশিষ্ট অংশ রক্ষা করেছে। বিষয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরকে জানিয়ে তদন্তের আবেদন করা হয়েছে।
বাড়িটি রাজশাহীর ঐতিহ্যের একটি অংশ। প্রায় দেড়শ বছর আগে এটি ছিল দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাসভবন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল মজিদ জানান, সত্তরের দশকে রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় থেকেই এ বাড়িটি তিনি দেখে আসছেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ভাঙার খবর শুনেই ছুটে এলাম। একসময়কার রাজবাড়ির অংশ এমনভাবে হারিয়ে যেতে দেখাটা কষ্টের।’
১৯৮১ সালে বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার পর সম্প্রতি জেলা প্রশাসন বাড়িটি এক লাখ ৬১ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে। ঠিকাদার এটি ভাঙার কাজ শুরু করলে মাটির নিচে সুড়ঙ্গের মতো কাঠামো দেখা যায়।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি মিজানুজ্জামান অপু বলেন, ‘এগুলো আসলে সুড়ঙ্গ নয়। তখনকার দিনের ভবনগুলোতে এমন নির্মাণশৈলী দেখা যেত। আমরা শুধু নিলামের নিয়ম মেনে ইট সংগ্রহ করছি।’
তবে ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষকদের বক্তব্য ভিন্ন। হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী জানান, ভবনটি রাজশাহীর জমিদারি ও প্রশাসনিক ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। নিলামে তুলে ভেঙে ফেলার আগে ভবনটির ঐতিহাসিক মূল্য যাচাই করা প্রয়োজন ছিল। এখন সুড়ঙ্গসদৃশ কাঠামো পাওয়া যাওয়ায় আরও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা জরুরি।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মহিনুল হাসান বলেন, সুড়ঙ্গের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে লাল নিশানা টাঙানো হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা পরিদর্শন করে কী জানান দেখা যাক। তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জরাজীর্ণ হলেও ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের কাছে রাজপরিবারের ঐতিহ্যের স্মৃতি হিসেবে পরিচিত। এখন সুড়ঙ্গসদৃশ কাঠামো পাওয়ার খবরে এলাকায় কৌতূহল আরও বেড়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকলে সংরক্ষণ আর না থাকলে নিলাম-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা—এই দুইয়ের মাঝেই রয়েছে ভবনটির ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত।
এদিকে সন্দীপ কুমার রায়ের রাজবাড়িসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থাপনা সংরক্ষণসহ তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন রাজশাহীর নাগরিক সমাজ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ও রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষকসহ সংস্কৃতিকর্মীরা। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এসময় গবেষক ও নৃবিজ্ঞানী শহিদুল ইসলাম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের (ইয়্যাস) সভাপতি শামীউল আলীম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী নাদিম সিনা, হাসিবুল হাসনাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় পঞ্চকবির অন্যতম কান্ত কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, মিঞাপাড়ায় রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের গুঁড়িয়ে দেওয়া বসতভিটা, তালন্দ ভবনসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগর। এখানে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বসবাস করেছেন এবং তাদের স্মৃতিবিজড়িত বাসস্থান আছে। এমন একটি বাড়ি নগরের দরগাপাড়া মৌজায়। বাড়িটি বানিয়েছিলেন দিঘাপাতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়।
এতে আরও বলা হয়, জনশ্রুতি আছে—মহারানি হেমন্তকুমারী (১৮৬৯-১৯৪২) পুঠিয়া থেকে রাজশাহী শহরে এলে এই বাড়িতে থাকতেন। স্থাপনাটির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যাচাই না করেই ভাঙার জন্য নিলামে তোলা মোটেও ঠিক হয়নি।
বোয়ালিয়া ভূমি অফিস জানিয়েছে, নগরীর দরগাপাড়া মৌজায় ৫২৪ খতিয়ানের এই জমির দাগ নম্বর ৪৭। শ্রেণি ‘সিভিল ডিভিশন অফিস’। মালিকের ঠিকানায় ‘দিঘাপতিয়া স্টেট, বলিহার, থানা–নাটোর’ লেখা । ১৯৮১ সালে বাড়িটি ‘অর্পিত সম্পত্তি’ ঘোষণা করা হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের পর কোনো সম্পত্তিকে অর্পিত ঘোষণা করা যাবে না। এরপর কীভাবে ১৯৮১ সালে বাড়িটিকে অর্পিত ঘোষণা করা হয়েছে, তা রহস্যজনক।
সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/এমএস
What's Your Reaction?