রাজশাহীতে পুলিশের ৫০ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি

1 month ago 10

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় পুলিশের বিভিন্ন থানা, ইউনিট থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। লুট হওয়া কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ এরই মধ্যে উদ্ধার হয়েছে। তবে শতভাগ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়ায় বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ফলে বুধবার থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও যৌথ অভিযান চালানো হবে। এসময় কোনো অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

এর আগে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই সময় শেষ হচ্ছে আজ।

রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার ও পরে সরকার পতনের একদফা দাবিতে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। শেষ তিনদিন ৩-৫ আগস্ট রাজশাহী বিভাগে পুলিশের ১৬ থানা, ১১টি ফাঁড়ি ও পুলিশ বক্সে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ হয়।

এসময় পুলিশের ১৫ সদস্য নিহত হন। যাদের সবাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। এছাড়া, চায়নিজ, এলএনজি, এসএনজি পিস্তল, শর্টগানসহ ২০৭টি অস্ত্র ও ১১ হাজার ২৭টি গোলাবারুদ লুট হয়। আবার, পুলিশের ১৮টি পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস, দুটি প্রাইভেটকার, তিনটি লেগুনা ও ১৭৪টি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়। ফলে আত্মগোপনে চলে যান পুলিশ সদস্যরা।

থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়লে ধসে পড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এতে রাজশাহীজুড়ে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে ময়নুল ইসলাম যোগ দেওয়ার পর, সবাইকে কর্মস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দেন। এরপর রাজশাহীতে সব থানায় শুরু হয় কার্যক্রম।

ডিআইজির কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহী বিভাগে লুণ্ঠিত ২০৭টি অস্ত্রের মধ্যে ১৫৭টি উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত ৫০টি মিসিং। আবার লুণ্ঠিত ১৬ হাজার ৮২২টি গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৭৯৫টি। ফলে এখনো ১১ হাজার ২৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। ফলে ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর রাজশাহীর থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। পুলিশ সদস্যরা আবারও কর্মস্থলে ফিরলেও নানা সংকটের কারণে জনগণের সেবা প্রদান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুরো গতি এখনো ফেরেনি। তবে, জনগণের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করে তাদের সহযোগিতায় শিগগির স্বাভাবিক কর্মস্পৃহা দেখাতে চান পুলিশ সদস্যরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশনস) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সব পুলিশ সদস্য কাজে ফেরায় কার্যক্রম চলমান। তবে পুরো উদ্যমে কাজ করতে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণ যত বেশি সহযোগিতা করবে পুলিশ সদস্যরা তত দ্রুত আগের ন্যায় পুরো উদ্যমে কাজ করতে সক্ষম হবে।

লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লুটকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর বুধবার থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক রাজশাহীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা হবে। অভিযানে কোনো অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাখাওয়াত হোসেন/জেডএইচ/এএসএম

Read Entire Article