রাজারহাটে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু বীজ

2 weeks ago 17
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে মানসম্মত আলু বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে বিএডিসির মাধ্যমে বীজ সরবরাহ করা হলেও চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ একেবারে কম হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আলুচাষিরা। জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান কাটা চলছে। অনেকে স্থানে আগাম বোরো ধান কেটে আলু চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যারা এরই মধ্যে জমি তৈরি করেছেন তারা এবং যারা আলু চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই উন্নত মানের বীজ সংগ্রহে তৎপর। তবে বাজারে মানসম্মত আলু বীজের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলা বিএডিসির তালিকাভুক্ত ডিলাররা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো উচ্চমূল্যে আলু বীজ বিক্রি করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রাজারহাট উপজেলায় ২ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আলু চাষ করতে প্রতি হেক্টর জমিতে দেড় টন হিসেবে ৩ হাজার ৮৭৭ টন আলু বীজের প্রয়োজন। অথচ উপজেলার ২৫ জন বিএডিসি ডিলারকে ২ দশমিক ৫৬ টন হিসেবে সর্বমোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬৪ টন আলু বীজ, যা চাহিদার তুলনায় ৬০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। এদিকে বীজের চাহিদা বেশি হওয়ায় বিএডিসির ডিলাররা সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে আলু বীজ বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা। নীতিমালা অনুযায়ী ডিলাররা ৫৮ টাকা কেজি দরে আলু বীজ ক্রয়ের পর কৃষকদের কাছে সর্বোচ্চ ৬৬ টাকা কেজি দরে বিক্রির নিয়ম থাকলেও এই নীতিমালা কেউ মানছেন না। বরং অধিকাংশ ডিলাররা প্রতি কেজি বীজ আলু ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সদরের গোবর্ধন দোলা গ্রামের কৃষক নুর কামাল বলেন, আমার নিজের এবং ভাড়া নেওয়া জমিসহ ২ একর জমিতে আলু বীজ বপনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে ডিলাররা ৫৮ টাকা কেজির আলু বীজ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করায় বীজ সংগ্রহ করতে পারিনি। একই গ্রামের আকরাম হোসেন বলেন, দুই একর জমিতে আলু বপনের প্রস্তুতি নিয়েছি। অনেক দিন ডিলারের পেছনে ঘুরেছি সবাই বলে বীজ নেই। পরে ডিলার তপু ও শাহিন কেজি ১১০ টাকা করে হলে বীজ দিতে রাজি হন। শেষে বাধ্য হয়ে বাবু মিয়া নামের একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে ৩০ বস্তা আলু বীজের জন্য অর্ধেক টাকা বায়না দিয়েছি। উপজেলা সদরের দূর্গারাম গ্রামের আলুচাষি আবু সাঈদ, গোবর্ধন দোলা গ্রামের আলম মিয়া, ফুলবাড়ি উপনচৌকি গ্রামের আরিফুল ইসলাম, উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের পীর মামুদ গ্রামের নজির হোসেন, আব্দুল মজিদ, আক্কাছ আলীসহ শতশত কৃষক আলু বপনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও বাজারে আলু বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররাও বলছেন বিএডিসির বীজ নেই। বিএডিসির ডিলার শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলার তপু বলেন, সামান্য বরাদ্দ পাওয়ায় অনেক আগেই আলু বীজ বিক্রি শেষ হয়েছে। কারও কাছে বেশি দাম নেওয়া হয়নি। এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, বিএডিসির বরাদ্দ কম দেওয়ায় কোনো কোনো ডিলার অন্যান্য কোম্পানির আলু বীজ বিক্রি করছেন। সেক্ষেত্রে মূল্য কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে তদারকি করা হচ্ছে। বিএডিসি বীজ কেউ বেশি মূল্যে বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান বলেন, অতিরিক্ত মূল্যে বিএডিসির আলু বীজ বিক্রির অভিযোগ ওঠায় আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছি।
Read Entire Article